যৌথ বিজ্ঞপ্তিতে তিস্তার অনুল্লেখ হতাশাব্যঞ্জক

পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ভারত সফর

বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন তাঁর প্রথম বিদেশ সফরে ভারতকে বেছে নেওয়ার মধ্যে এ দুই দেশের সুসম্পর্কের প্রতিফলন ঘটেছে। বাংলাদেশ–ভারত জয়েন্ট কনসালটেটিভ কমিশনের পঞ্চম বৈঠকে উভয় দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের নানা বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। তবে আমাদের দেশে প্রধান আগ্রহের বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে তিস্তা নদীর পানিবণ্টন চুক্তি ও রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমারের গণহত্যার বিচার এবং শরণার্থী সংকট উত্তরণে ভারতের অবস্থান। কিন্তু রোহিঙ্গা বিষয়ে ভারতীয় অবস্থান আংশিক জানা গেলেও যৌথ বিজ্ঞপ্তিতে তিস্তা চুক্তির উল্লেখ না থাকা আমাদের জন্য হতাশাব্যঞ্জক।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তাঁর সরকারের মেয়াদের সূচনায় বাংলাদেশে প্রথম সফরকালে অবিলম্বে তিস্তাসহ অন্যান্য অভিন্ন নদ–নদীর পানির ভাগাভাগির বিষয়ে অঙ্গীকার করেছিলেন। তার পরের বছরগুলোতে দুই দেশের সম্পর্ক ক্রমে ঘনিষ্ঠতর হয়েছে। ভারতের নেতারা ও শীর্ষস্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলো এই খবরই দিয়ে আসছে যে নিরাপত্তাসহ এমন কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নেই, যেখানে বাংলাদেশ ভারতের প্রত্যাশা পূরণে কার্পণ্য করেছে। গত মে মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আমরা কোনো প্রতিদান চাই না। আমরা ভারতকে যা দিয়েছি, সেটি তারা সারা জীবন মনে রাখবে।’

সুসম্পর্ক ও সহযোগিতার ভিত্তিতেই উভয় দেশ এগিয়ে যেতে পারে। এ সম্পর্কের বিকাশ প্রচলিত দর–কষাকষির বাইরে থাকা উচিত। তিস্তা নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা পাওয়া বাংলাদেশের জনগণের আন্তর্জাতিক আইনে স্বীকৃত একটি অধিকার। এটা এ দেশের লাখ লাখ মানুষের জীবন–মরণ প্রশ্নের সঙ্গে জড়িত। অথচ বিষয়টি ভারতের একটি রাজ্য সরকারের ‘রাজনৈতিক সিদ্ধান্তহীনতার’ ওপর ঝুলছে বলে দাবি করা হয়ে থাকে। এটা তো অনুচিত, অনুদার প্রতিবেশী নীতির পীড়াদায়ক প্রতিফলন।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছিলেন, তিনি তাঁর ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মেয়াদের মধ্যে তিস্তা চুক্তি সম্পন্ন করবেন। মেয়াদ শেষে শেখ হাসিনা পুনর্নির্বাচিত। ভারতে নির্বাচন অত্যাসন্ন। টানা তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার গঠনকে ভারত প্রথম স্বাগত জানিয়েছে। এই সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী যখন ভারত সফরে গেলেন, তখন বাংলাদেশের জনসাধারণের এমন প্রত্যাশা স্বাভাবিক ছিল যে তিনি একটা সুখবর বয়ে আনবেন। নয়াদিল্লিতে প্রকাশিত যৌথ বিজ্ঞপ্তিতে দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রী, ‘প্রতিটি খাত—নিরাপত্তা থেকে সীমান্ত ব্যবস্থাপনা, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ প্রবাহ, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, নদীর পানি বণ্টন, পরিবহন কানেকটিভিটি, সংস্কৃতি এবং মানুষের সঙ্গে মানুষের সম্পর্কে’, অতীতের থেকে ঘনিষ্ঠতরভাবে কাজ করায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। ঢাকায় ১০ ফেব্রুয়ারি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তিস্তার ‘আশু সুরাহা’ চেয়েছেন আর ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ‘আশু সমাধানের’ আশ্বাস দিয়েছেন।

ভারতের প্রচারিত যৌথ বিজ্ঞপ্তিতে প্রত্যেক ‘বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গার নিরাপদ, দ্রুত ও টেকসই প্রত্যাবাসনের’ আশ্বাস রয়েছে। কিন্তু সম্প্রতি ভারত থেকে বিতাড়িত রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে প্রবেশের বিষয়টি আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভারতের কাছে তুলে ধরেছেন কি না, তার উল্লেখ নেই। রোহিঙ্গা গণহত্যার দায়ে অভিযুক্তদের আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালতে বিচারেও বাংলাদেশ ভারতকে কিছু বলেছে বা ভারত বিষয়টিকে কীভাবে দেখে, এ বিষয়েও বাংলাদেশের জনগণ জানতে চায়।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তাঁর মেয়াদে তিস্তা চুক্তি করার যে অঙ্গীকার করেছিলেন, আমরা ভারতের আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের আগেই তা পূরণ করার আহ্বান জানাই। ভারত সরকার সে দেশ থেকে রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের কী নীতির ভিত্তিতে বাংলাদেশে ঠেলে দিল, আমরা তারও ব্যাখ্যা আশা করি।