পবিত্র শবে বরাত আজ। ইসলামের ভাষ্যমতে, সর্বাধিক ফজিলতপূর্ণ রজনীগুলোর মধ্যে একটি হলো শবে বরাত। হাদিসের ভাষ্য অনুযায়ী, আল্লাহ তাআলা এ রাতে বান্দাদের এক বড় অংশের গুনাহ মাফ করে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেন। এই রাতে ক্ষমাপ্রার্থনার মাধ্যমে ভবিষ্যতে পরিশুদ্ধ জীবনযাপনের জন্য আল্লাহর অনুগ্রহ লাভ করা যায়। পাপ-পঙ্কিলতায় জর্জরিত কোনো ব্যক্তির জন্য খাঁটি তওবা করে আল্লাহর নৈকট্য লাভের অপূর্ব সুযোগ এনে দেয় এ মহিমান্বিত রজনী।
শবে বরাত মুসলমানদের কাছে পবিত্র রমজানের আগমনী বার্তা বয়ে আনে। এর মধ্য দিয়েই শুরু হয় রমজান মাসের সিয়াম সাধনার প্রস্তুতি। মুসলিম সম্প্রদায়ের কাছে এটি ভাগ্য নির্ধারণের রাতও। এ রাতে আল্লাহ পরবর্তী বছরের জন্য মানবজাতির রিজিক ও সবার ভাগ্য নির্ধারণ করেন এবং ধর্মপ্রাণ মুসলমানের গুনাহ মাফ করে দেন। এ রাতে মুসলমানরা আল্লাহর কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করবেন। যাঁরা রিজিক অনুসন্ধানকারী, তঁারা প্রার্থনা করবেন রিজিকের জন্য। বিপদ থেকে উদ্ধার পাওয়ার জন্য প্রার্থনা করবেন বিপদগ্রস্ত মানুষ। ইসলামের নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) এই রাতে নফল ইবাদত-বন্দেগিতে নিমগ্ন থাকতে মুসলমানদের নির্দেশনা দিয়ে গেছেন। এই রাতে আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দাদের জন্য উন্মুক্ত করে দেন রহমত ও দয়ার ভান্ডার। তাই মুসলিম সম্প্রদায়ের কাছে এটি উৎসবের রাতও।
গত বছরের মতো এ বছরও শবে বরাত করোনার সংকটময় সময়ের মধ্য দিয়ে পালিত হচ্ছে। ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতার পাশাপাশি ঐতিহ্যগতভাবে এ উৎসবের আনন্দ ভাগাভাগি করে নেন মুসলিম সম্প্রদায়। তাঁরা সাধ্যমতো ভালো খাবার তৈরি করেন এবং প্রতিবেশী, আত্মীয়স্বজন ও দরিদ্রদের মধ্যে খাবার বিতরণের মাধ্যমে এর আনন্দটুকু ভাগ করে নেন। এক বছরের বেশি সময় ধরে চলা করোনাভাইরাসের সংক্রমণ সেই চিরাচরিত ছবিকে অনেকটাই বদলে দেবে। দেশের বর্তমান বাস্তবতায় মানুষ উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। শবে বরাতের মূল চেতনা এই উদ্বেগের মধ্যেও মানুষকে পরস্পরের প্রতি আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে আরও বেশি সহানুভূতিশীল করে তুলবে, সেটাই প্রত্যাশিত।
করোনাভাইরাস ও সব ধরনের অসহিষ্ণুতার কবল থেকে দেশ ও বিশ্বমানবতা মুক্তি পাক এবং সর্বশক্তিমান আল্লাহর করুণা আমাদের সবার ওপর বর্ষিত হোক, এটাই হোক এই পবিত্র রাতের প্রার্থনা। এই রাতের কল্যাণে সংকটকাল কেটে যাক, আগামী দিনগুলো সুন্দর ও মঙ্গলময় হয়ে উঠুক—এটাই আমাদের কামনা।