পবিত্র আশুরা

আজ পবিত্র আশুরা। হিজরি ১৪৪৩ সালের ১০ মহররম। মুসলমানদের এক গভীর শোকের দিন। এই দিনে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর দৌহিত্র হজরত ইমাম হোসাইন (রা.) অন্যায় ও ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে চক্রান্তকারী ইয়াজিদ বাহিনীর হাতে কারবালা প্রান্তরে শাহাদতবরণ করেন।

মুয়াবিয়ার মৃত্যুর পর তাঁর ছেলে ইয়াজিদ অবৈধভাবে ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করেন এবং এ জন্য ষড়যন্ত্র ও বলপ্রয়োগের পথ বেছে নেন। মহানবী (সা.)-এর আরেক দৌহিত্র হজরত ইমাম হাসান (রা.)-কে বিষপানে হত্যা করা হয়। ইয়াজিদ বাহিনীর হাতে অবরুদ্ধ হয়ে পরিবার-পরিজন, ৭২ জন সঙ্গীসহ শাহাদাতবরণ করেন হজরত ইমাম হোসাইন (রা.)। এ হত্যাকাণ্ড ছিল অত্যন্ত নির্মম। নিষ্ঠুর ইয়াজিদ বাহিনী অসহায় নারী ও শিশুদের পানি পর্যন্ত পান করতে দেয়নি। ইমাম হোসাইন (রা.) ও তাঁর অনুসারীদের এ আত্মত্যাগ ইসলামের ইতিহাসে অনন্য দৃষ্টান্ত হয়ে আছে।

কারবালা প্রান্তরের সেই শোকাবহ ঘটনার স্মরণে প্রতিবছর ১০ মহররম পবিত্র আশুরা পালিত হয়। এই দিনে সাধারণ মুসলমানরা নফল রোজা রাখেন এবং কারবালায় শাহাদাতবরণকারীদের জন্য বিশেষ দোয়া করেন। শিয়া সম্প্রদায় এদিনে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকে, যার মধ্যে তাজিয়া মিছিল উল্লেখযোগ্য। বাংলাদেশে যুগ যুগ ধরে অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে আশুরা পালিত হয়ে আসছে। তবে ২০১৫ সালে উগ্রপন্থী সন্ত্রাসী গোষ্ঠী ঢাকায় আশুরার আগের রাতে তাজিয়া মিছিলের প্রস্তুতিকালে হামলা চালিয়ে বেশ কয়েকজনকে হত্যা করেছিল। বগুড়া জেলায় এক শিয়া মসজিদে নামাজরত একজন মুসল্লিকে হত্যার ঘটনাও ঘটেছিল। বিশেষ করে এই দুটি ঘটনার পর থেকে আশুরার দিন যাতে কোনো ধরনের নাশকতামূলক ঘটনা না ঘটে, তা নিশ্চিত করতে সরকার নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করে আসছে।

এ বছর আশুরা এসেছে করোনার প্রাদুর্ভাবের মধ্যে। সংক্রমণের আশঙ্কায় সরকার তাজিয়া মিছিল করার অনুমতি দেয়নি। শিয়া সম্প্রদায়ও রাস্তায় তাজিয়া মিছিল বের না করে হোসেনি দালানে অবস্থিত ইমামবাড়া চত্বরে তাদের কর্মসূচি সীমিত রাখছে। তাদের এ সিদ্ধান্ত প্রশংসনীয়।

নিছক আনুষ্ঠানিকতা নয়, আশুরার যে ত্যাগের চেতনা, তাকে হৃদয়ে ধারণ করতে পারলে পৃথিবী থেকে হিংসা-বিদ্বেষের অবসান ঘটবে। ঢাকাসহ সারা দেশে যাতে শান্তিপূর্ণভাবে পবিত্র আশুরা পালিত হয়, সে জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে হবে। আশুরার মূল চেতনা অন্যায়ের বিরুদ্ধে ন্যায়ের সংগ্রাম। সেই সংগ্রামে সাময়িক আঘাত এলেও চূড়ান্ত বিজয় অবধারিত। এটাই মহররমের শিক্ষা। এই শিক্ষা ও চেতনার আলোকে জাতি এগিয়ে যাবে। এই পবিত্র দিনে সেটিই প্রত্যাশা।