অভিযান চলুক, জেলেদেরও সুরক্ষা চাই

পদ্মায় কারেন্ট জাল

সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

প্রায় দুই দশক আগে ২০০২ সালে সংশোধিত মৎস্য সংরক্ষণ আইনে কারেন্ট জাল উৎপাদন, পরিবহন, বাজারজাতকরণ, সংরক্ষণ ও ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। বাংলাদেশের মত্স্য সম্পদের জন্য ক্ষতিকর বিবেচনায় তখন ওই আইন করা হয়। বাস্তবতা হলো মাঝেমধ্যে কারেন্ট জালবিরোধী অভিযান চালানো হলেও এ আইন এখনো মানা হচ্ছে না। এখনো নদ-নদী, খাল-বিলে এ জাল ব্যবহৃত হচ্ছে। প্রথম আলোর প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, পদ্মায় অনেকটা প্রকাশ্যেই কারেন্ট জাল দিয়ে মাছ ধরা হচ্ছে। রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে পদ্মায় মাছ ধরা জেলেদের কাছ থেকে অবৈধ কারেন্ট জাল আটক ও নষ্ট করা হচ্ছে।

গোয়ালন্দের চার ইউনিয়ন—দৌলতদিয়া, দেবগ্রাম, উজানচর ও ছোটভাকলার পাশ দিয়ে পদ্মা নদী বয়ে গেছে। নদীতীরের অধিকাংশ পরিবারের প্রধান পেশা মাছ শিকার। কারেন্ট জালের বিক্রি ও ব্যবহার নিষিদ্ধ জেনেও তাঁরা তা ব্যবহার করেন। অনেকে কারেন্ট জালের সঙ্গে মশারি জাল (ঘন ও ছোট ছিদ্র) ব্যবহার করেন। এসব জাল দিয়ে জেলেরা দেশি প্রজাতির ডিমওয়ালা ও পোনা মাছ নিধন করছেন।

কারেন্ট জাল দিয়ে মাছ ধরা অব্যাহত থাকলে এর ফল কী হতে পারে, তা বিবেচনায় না নিয়ে জেলেরা দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিচ্ছেন, এটি সন্দেহাতীত। তবে যাঁরা এ জাল উৎপাদন ও বিক্রি করেন, তাঁদের দায় আরও বেশি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও এর দায় এড়াতে পারে না। কারেন্ট জাল আটক এবং সংশ্লিষ্ট জেলেদের মোটা অঙ্কের অর্থ জরিমানার খবর মাঝেমধ্যে প্রকাশ পেলেও এ জাল উৎপাদনকারী লোকজনের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে দেখা যায় না।

যাঁরা পদ্মায় মাছ ধরেন, তাঁদের মধ্যে অনেকেই আছেন, যাঁদের বাড়িঘর নদীতে বিলীন হয়েছে। এখন জীবিকার তাগিদে বাধ্য হয়ে তাঁরা কারেন্ট জাল দিয়ে মাছ ধরেন। কারণ, একশ্রেণির ব্যবসায়ী দারিদ্র্যের সুযোগ নিয়ে তাঁদের হাতে কারেন্ট জাল বা মশারি জাল তুলে দিচ্ছেন। এসব জেলের যথাযথ পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেওয়া দরকার। অসৎ জাল ব্যবসায়ীরা যাতে তাঁদের দারিদ্র্যের সুযোগ নিতে না পারেন, তা নিশ্চিত করা দরকার। এরপর কারেন্ট জাল নির্মূলে সর্বাত্মক অভিযান চালালে তা নিঃসন্দেহে কার্যকর হবে।