নির্বাসনে গান!

সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

সত্য বটে, বেপরোয়া ডিজে পার্টি প্রায়ই আমাদের রাতের ঘুম হারাম করে, বিভিন্ন দিবসকে উপলক্ষ করে পাড়ার উদ্দাম সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান মাঝেমধ্যেই আমাদের সন্তানদের পড়াশোনার ব্যাঘাত ঘটায়, পাশের বাসার বিয়ের অনুষ্ঠানের উচ্চকিত গানবাজনা আমাদের প্রবীণদের অসুস্থ পর্যন্ত করে। কিন্তু এ অনাচার ঠেকানোর জন্য সামাজিক থেকে আইনি, অনেক ধরনের বিধিব্যবস্থাই আছে। এ ধরনের অনুষ্ঠান করার জন্য আগে থেকেই যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি নেওয়ার নিয়ম আছে, আবাসিক এলাকায় কত ডেসিবেল পর্যন্ত আওয়াজে অনুষ্ঠান করা যাবে, তা-ও সুনির্দিষ্ট করে দেওয়া আছ। আর এসব বিধি কেউ লঙ্ঘন করলে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করার সুযোগও রয়েছে।

কিন্তু এসব রাস্তার কোনোটাতেই হাঁটলেন না নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শাহজালাল বাদল, গানকেই সোজা নির্বাসনে পাঠানোর উদ্যোগ নিলেন। আগামীকাল শনিবার থেকে তাঁর ওয়ার্ডে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর করার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। কাউন্সিলর অফিসে আয়োজিত এক সভায় বাদলের উপস্থিতিতে এক ব্যক্তি উপস্থিত সবার উদ্দেশে বলেন, ‘এই এলাকায় গানবাজনা নিষিদ্ধ। এ জন্য কাউন্সিলর অফিস থেকে প্রতিটি মসজিদ কমিটি ও পঞ্চায়েত কমিটি বরাবর চিঠি ইস্যু করা হবে। শুক্রবার জুমার নামাজের বয়ানে বলে দেওয়া হবে। প্রত্যেক বাড়িওয়ালাকে আপনারা বলে দেবেন।’

আর এ গান নিষিদ্ধ করার যেসব কারণ তিনি দিয়েছেন, সেই একই যুক্তিতে কেউ হয়তো ধর্মীয় সভা–সমাবেশ থেকে শুরু করে রাজনৈতিক সভা পর্যন্ত, সব ধরনের সমাবেশেই মাইকের ব্যবহার নিষিদ্ধ করার দাবি তুলতে পারেন। এমনকি যে ধরনের প্রচারণার মাধ্যমে নির্বাচনী বৈতরণি পার হয়েছেন বাদল, তা-ও হয়তো কারও কারও কাছে নিষিদ্ধ হওয়ার উপযোগী মনে হতে পারে।

গান ভালো লাগা না লাগাটা সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দের ব্যাপার। আপনার ভালো না লাগলে আপনাকে জোর করে শোনাতে যাওয়াটা যেমন অন্যায়, তেমনি আমার ভালো লাগাটাকে জোর করে বাধা দেওয়াটাও সমান অপরাধ। বহু জাতি-ধর্ম-বর্ণের গণতান্ত্রিক একটা সমাজ এ সহিষ্ণুতার আবহেই চলে। তারপরও কারও কোনো কর্মকাণ্ড যদি অন্য কারও পছন্দ না হয়, তাহলে প্রতিকারের জন্য রয়েছে অনেক আইনি রাস্তা। ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত একজন জনপ্রতিনিধি যখন গানের মতো বিশ্বজনীন একটা ইস্যুতে সেই রাস্তায় না হেঁটে স্বেচ্ছাচারী পথ বেছে নেন, তখন গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত হওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে।