নারায়ণগঞ্জে কিশোর খুন

রহস্যময় ও নৃশংস খুনের ধারাবাহিকতায় এবার প্রাণ হারাল নারায়ণগঞ্জের মেধাবী কিশোর ত্বকি। তার বাবা নারায়ণগঞ্জের গণজাগরণ মঞ্চের উদ্যোক্তা ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রফিউর রাব্বি। নারায়ণগঞ্জে তিনি জাতীয় সম্পদ রক্ষার আন্দোলনের পুরোধা, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সোচ্চার, নাগরিক অধিকার আদায়ের আন্দোলনের সামনের সারির মানুষ, মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীর পক্ষে শক্ত অবস্থান নিয়েছিলেন প্রভাবশালীদের ভ্রুকুটি উপেক্ষা করে। এত সরব ও প্রতিবাদী মানুষের কিশোরপুত্র খুন হওয়াকে তাই বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলা যাচ্ছে না। আমরা নিহত ত্বকির শোকার্ত মা-বাবা ও স্বজনদের গভীর সমবেদনা জানাই।তানভীর মুহাম্মদ ত্বকি গত বুধবার বিকেলে বাসা থেকে বেরিয়ে আর ফেরেনি। গত শুক্রবার সকালে তার লাশ পাওয়া যায় শীতলক্ষ্যা নদীর এক খালে। রফিউর রাব্বি রাজনৈতিক অপশক্তি এবং যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষকশক্তির উভয়ের বিরুদ্ধেই প্রতিবাদী বিধায় তিনি কোনো এক পক্ষের প্রতিহিংসার শিকার হতে পারেন। পুলিশ এখনো হত্যাকাণ্ডের সুনির্দিষ্ট কোনো অভিপ্রায় (মোটিভ) আবিষ্কার করতে পারেনি। আমরা আশা করি, সর্বোচ্চ নিষ্ঠা ও তৎপরতার সঙ্গে আসামিদের চিহ্নিত করে বিচারের মুখোমুখি করা হবে। এই হত্যার প্রতিবাদে নারায়ণগঞ্জে স্বতঃস্ফূর্ত হরতাল পালিত হয়েছে। যুদ্ধাপরাধের বিচারের দাবিতে আন্দোলনের পটভূমিতে রাজনৈতিক সন্ত্রাস-নাশকতা যতটা বেড়েছে, সর্বস্তরের মানুষের নিরাপত্তাও সে অনুপাতে বিঘ্নিত হচ্ছে। বিচারবিরোধী চক্রের সন্ত্রাসী তৎপরতার সুযোগে সমাজে অন্যান্য অপরাধও বেড়েছে। রফিউর রাব্বির মতো জনপ্রিয় ব্যক্তির জীবনে যদি এমন মর্মান্তিক আঘাত নেমে আসে, তাহলে সাধারণ মানুষের অবস্থা কতটা অরক্ষিত, তা সহজেই অনুমেয়।এর আগে ব্লগার রাজীবসহ গণজাগরণ মঞ্চের সমর্থক একাধিক তরুণকে দেশের বিভিন্ন স্থানে হত্যা করা হয়। এসব হত্যার পেছনে ছিল রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ এবং ভয়ের আবহ সৃষ্টি করা। ত্বকির খুনের ঘটনাটি সেই পরিকল্পনারই অংশ কি না, তা খুঁজে দেখতে হবে তদন্তকারীদের। বাসভাড়া বাড়ানোর বিরুদ্ধে আন্দোলনে জড়িত হওয়ায় নারায়ণগঞ্জের একটি প্রভাবশালী মহল তাঁর ওপর ক্ষিপ্ত। এই অবস্থায় সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তই সত্য উদ্ঘাটন করতে পারে। সত্যের উন্মোচন ছাড়া যেমন দোষীদের শাস্তি দেওয়া যাবে না, তেমনি জনমনে ঘনীভূত আশঙ্কাও কমবে না।