অবিলম্বে বাঁধ কেটে দিন

নদীতে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ

নদী কোনো ব্যক্তিমালিকের হয় না, নদীর মালিক জনসাধারণ। নদীর পানি ও মাছের ওপর কোনো ব্যক্তি, সংঘ, সংস্থা বা দলের একচ্ছত্র অধিকার নেই। কিন্তু ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার শ্রীনাথপুর গ্রামের ভেতর দিয়ে যাওয়া ইছামতী নদীর একচ্ছত্র অধিকার কায়েম করেছেন ওই গ্রামের শরিফুল ইসলাম নামের বাসিন্দা, যিনি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের একজন সক্রিয় সদস্য। তিনি নদীতে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ শুরু করেছেন এবং এমন আদেশ জারি করেছেন যে নদীর ওই অংশে কেউ নামতে পারবে না। অর্থাৎ ইছামতী নদীর ওই অংশটিকে তিনি তাঁর ব্যক্তিগত সম্পত্তি ধরে নিচ্ছেন; প্রাকৃতিক স্রোতস্বিনীটির স্বাভাবিক পানিপ্রবাহে বিঘ্ন সৃষ্টি করে সেটির ক্ষতিসাধন করছেন এবং গ্রামের অন্য বাসিন্দাদের সেটির দান থেকে বঞ্চিত করছেন।

ইছামতী নদীর ওই অংশের পারে জেলে সম্প্রদায়ের বাস। যুগ যুগ ধরে তারা নদীতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেছে। গ্রামের মানুষ এই নদীতে গোসল করে, শিশু-কিশোরেরা সাঁতার কাটে, খেলাধুলা করে। কিন্তু শরিফুল ইসলাম নদীর মাঝ-বরাবর মাটি ফেলে এবং বাঁশের বেড়া দিয়ে বাঁধ তৈরি করে মাছ চাষ শুরু করে জেলে সম্প্রদায়ের নদীতে নামা বন্ধ করে দিয়েছেন। নদীর প্রায় ৬০ বিঘা অংশ তিনি এভাবে দখল করে নিয়েছেন, অথচ স্থানীয় প্রশাসন বিষয়টির কিছুই জানে না। মহেশপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্ব পালনকারী সহকারী কমিশনার (ভূমি) প্রথম আলোকে বলেন, তিনি বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নন। তবে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেবেন।

শরিফুল ইসলাম শুধু ক্ষমতাসীন দলের একজন সক্রিয় ও প্রভাবশালী কর্মীই নন, স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের এক সদস্যের ভাইও। এ কারণেই কি তিনি নদীতে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ শুরু করার এবং প্রায় ১৭টি জেলে পরিবারকে তাদের জীবিকার অধিকার থেকে বঞ্চিত করার সাহস পেয়েছেন?

ক্ষমতাসীন দল ও তার সহযোগী সংগঠনগুলোর নাম ব্যবহার করে নানা ধরনের অন্যায়, জবরদস্তিমূলক ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের ব্যাপকতার দৃশ্যমান প্রেক্ষাপটেই শরিফুল ইসলামের এই কাজটাকে দেখতে হবে। এসব ক্ষেত্রে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে সরকারি প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কর্তৃপক্ষের শিথিলতার ফলে অপরাধপ্রবণ ব্যক্তিরা উৎসাহ পেয়ে থাকে। তারা ভাবে যে ক্ষমতাসীন দলের নাম ব্যবহার করে যেকোনো অন্যায়-অপরাধ করে পার পাওয়া যায়। শরিফুল ইসলাম ইছামতী নদীর মাঝ-বরাবর মাটি ফেলে এবং বাঁশ পুঁতে বাঁধ তৈরি করে ফৌজদারি অপরাধ করেছেন, যা পরিবেশ সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য। কিন্তু পরিবেশ অধিদপ্তরের স্থানীয় কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কী পদক্ষেপ নিয়েছে?

আমরা স্থানীয় প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। শরিফুল ইসলামের বিরুদ্ধে আইনানুগ পদক্ষেপ নেওয়া হোক এবং ইছামতী নদীর ওই অংশটির বাঁধ অবিলম্বে সরিয়ে নদীর স্বাভাবিক পানিপ্রবাহ ফিরিয়ে আনা হোক।