রাজধানী ঢাকার হাজারীবাগ ও কামরাঙ্গীরচর এলাকার বুড়িগঙ্গা নদীর ‘আদি চ্যানেল’ নামের অংশটি থেকে সব ধরনের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। গত বৃহস্পতিবার হাইকোর্টের একটি ভার্চ্যুয়াল বেঞ্চ ঢাকার জেলা প্রশাসক ও বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যানের উদ্দেশে দেওয়া আদেশে বলেছেন, নদীটির আদি চ্যানেল অংশে সিএস বা আরএস জরিপ অনুসারে অবৈধ বলে চিহ্নিত ৭৪টি স্থাপনা তিন মাসের মধ্যে উচ্ছেদ করতে হবে। মাটি ভরাট করে ও অন্যান্য উপায়ে নদীর যেসব জায়গা দখল করা হয়েছে, সেগুলোও একই সময়ের মধ্যে উদ্ধার করতে হবে। এই কাজে সহযোগিতা করার জন্য আদালত পুলিশের মহাপরিদর্শক, র্যাবের মহাপরিচালক ও ঢাকা মহানগর পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন।
উচ্চ আদালতের এই আদেশ প্রদানের খবরে দূষণে, দখলে পর্যুদস্ত নদী বুড়িগঙ্গা পুনরুদ্ধারের আশা জেগে ওঠে। আর একই সঙ্গে মনে হয়, অতীতে অনেকবার এমন আদেশের খবর প্রচারিত হয়েছে। শুধু বুড়িগঙ্গা নয়, ঢাকা মহানগরের চারপাশ দিয়ে প্রবাহিত আরও তিনটি নদীর দূষণ বন্ধ করা এবং দখলকৃত জায়গাগুলো পুনরুদ্ধারের অনেক উদ্যোগের খবর অনেকবার প্রচারিত হয়েছে। নদী–জলাশয়কে জীবন্ত সত্তা হিসেবে গণ্য করতে হবে—এমন আদেশও হাইকোর্ট দিয়েছেন। কিন্তু নদ–নদী ও খাল–জলাশয়ের দূষণ ও দখল বন্ধ হচ্ছে না; বরং দিন দিন আরও বেড়েই চলেছে। কারণ, নদ–নদী রক্ষার জন্য নিয়মিত নজরদারি প্রয়োজন, দখল হওয়ামাত্র সেসব জায়গা পুনরুদ্ধার করা প্রয়োজন—এমন স্থায়ী ব্যবস্থা আমাদের দেশে নেই।
কোনো নদ–নদীই রাতারাতি দখল বা ভরাট হয়ে যেতে পারে না। এসব ঘটে দীর্ঘ সময় ধরে। নিয়মিত নজরদারির ব্যবস্থা থাকলে নদ–নদীগুলো এমনভাবে দখল ও ভরাটের শিকার হতে পারত না। অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের অভিযান মাঝেমধ্যে চলে; কিন্তু দখলমুক্ত জায়গাগুলো আবারও দিনে দিনে দখল হয়ে যায়। আদালতের বৃহস্পতিবারের আদেশ আগামী তিন মাসের মধ্যেই বাস্তবায়ন করা হবে—আমরা এটা আশা করতে চাই। সেই সঙ্গে এমন নিশ্চয়তা চাই যে দখলমুক্ত হওয়ার পর বুড়িগঙ্গার আদি চ্যানেল আবারও দখল হবে না। এটা শুধু এই নদীর ক্ষেত্রে নয়, দেশের সব নদ–নদী ও জলাশয়ের ক্ষেত্রেও নিশ্চিত করা প্রয়োজন।
সীমিত ভূখণ্ডের মধ্যে অতি মাত্রায় জনঘনত্বপূর্ণ এই দেশে নদ–নদী–জলাশয়গুলোকে দূষণ ও দখলের হাত থেকে রক্ষা করা একান্ত
প্রয়োজন। কারণ, প্রাকৃতিক পরিবেশের সঙ্গে মানুষের জীবন ও জীবিকার সম্পর্ক অবিচ্ছেদ্য।