প্রবাসী শ্রমিকদের ওপর খাঁড়ার ঘা

দ্বিগুণ বিমানভাড়া

করোনা মহামারির ধকল কাটিয়ে যখন বিদেশে বাংলাদেশের কর্মী যাওয়া শুরু করেছেন, তখনই তাঁদের দ্বিগুণ বিমানভাড়া গুনতে হচ্ছে। নভেম্বর পর্যন্ত মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে বিমানের টিকিটের দাম ছিল ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকা। এখন তা ৭০ থেকে ৯০ হাজার টাকায় পৌঁছেছে। আবার বেশি দাম দিয়েও বিমানের টিকিট মিলছে না। টিকিটের জন্য রাস্তায় মিছিল করতে হচ্ছে।

এ অবস্থার জন্য দায়ী কে? বাংলাদেশ থেকে আন্তর্জাতিক রুটে দেশীয় ও বিদেশি পরিবহন সংস্থার ফ্লাইট কম চলাচল করছে না। তারপরও এ ভাড়া বৃদ্ধি ও টিকিট সংকটের পেছনে কোনো চক্র বা সিন্ডিকেটের কারসাজি আছে কি না খতিয়ে দেখা দরকার। অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্সি অব বাংলাদেশের (অ্যাটাব) অভিযোগ, ভাড়া বাড়ানোর জন্য এয়ারলাইনসগুলোই দায়ী। অন্যদিকে জনশক্তি রপ্তানিকারকদের অভিযোগ, বিমান পরিবহন সংস্থা ও অ্যাটাব সিন্ডিকেট করেই বিমানভাড়া বাড়িয়েছে।

জনশক্তি রপ্তানির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মতে, আন্তর্জাতিক রুটে চলাচলকারী যাত্রীদের ১৫ থেকে ২০ শতাংশ যাত্রী বাংলাদেশ বিমানে যাতায়াত করেন। অবশিষ্ট ৮০ শতাংশ যাত্রী বিদেশি এয়ারলাইনসে চড়েন। সে ক্ষেত্রে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস ভাড়া বাড়ালে অন্যান্য এয়ারলাইনস বাড়াবে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু তারা তো ইচ্ছেমতো ভাড়া বাড়াতে পারে না। আন্তর্জাতিক রুটে মাইলেজ হিসেবে ভাড়া নির্ধারণ করা হয়। একই রুটের টিকিট এক মাস আগে ৪০ হাজার টাকায় বিক্রি হলে এখন কেন ৮০-৮৫ হাজার টাকায় বিক্রি হবে? এটি বিদেশগামী গরিব শ্রমিকদের জন্য মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হিসেবে দেখা দিয়েছে। অ্যাটাব দাবি করেছে, যাত্রীর নামেই টিকিট বিক্রি হচ্ছে। ফলে ট্রাভেল এজেন্সিগুলোর কারসাজির সুযোগ নেই। জিডিএস তথা গ্লোবাল ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেমের মাধ্যমে অনলাইনে বিক্রি হয়। যেকোনো স্থান থেকে টিকিট অনলাইনে দেখা যায়। বায়রার পাল্টা বক্তব্য হলো, বাংলাদেশ বিমান গুচ্ছ টিকিট বিক্রি না করলেও অন্য এয়ারলাইনসগুলো করছে।

সংকট সমাধানে অ্যাটাব ও বায়রা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসসহ মধ্যপ্রাচ্যের এয়ারলাইনসগুলোর ফ্লাইট সংখ্যা বৃদ্ধি করা, বাংলাদেশের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) কর্তৃক এয়ারলাইনসগুলোর অতিরিক্ত স্লটের অনুমোদন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করা, প্রবাসী কর্মীদের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে বিশেষ ভাড়া ঘোষণা করা, এয়ারলাইনসগুলোর অযৌক্তিক ভাড়া বৃদ্ধি বন্ধে রেগুলেটরি বোর্ড গঠন করার প্রস্তাব দিয়েছে। তাদের এসব দাবি অযৌক্তিক নয়। বাংলাদেশ বিমান যদি মধ্যপ্রাচ্যগামী শ্রমিকদের কাছ থেকে বাড়তি ভাড়া নিয়ে সারা বছরের লোকসান কাটাতে চায়, সেটি হবে প্রবাসী শ্রমিকদের ওপর জবরদস্তি। বিমান লাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে দাঁড়াক তা আমরাও চাই; কিন্তু সে জন্য প্রবাসী শ্রমিকেরা কেন বাড়তি ভাড়া গুনবেন?

প্রতিদিন মধ্যপ্রাচ্যে পাঁচ হাজারের মতো যাত্রীর যাওয়ার কথা থাকলেও ফ্লাইট-স্বল্পতার কারণে যেতে পারছেন মাত্র তিন হাজার। টিকিটের সংকটের কারণে কোনো শ্রমিক নির্ধারিত সময়ে চাকরিতে যোগ দিতে না পারলে সেই দায় কে নেবে? এ ক্ষেত্রে বেবিচককে অবিলম্বে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে, সংশ্লিষ্ট রুটগুলোতে ফ্লাইট সংখ্যা বাড়াতে হবে। এ ছাড়া বায়রা প্রবাসী শ্রমিকদের জন্য ছাড় মূল্যে টিকিট দেওয়ার যে প্রস্তাব দিয়েছে, সরকারকে তা-ও বিবেচনায় আনতে হবে। কেননা, প্রবাসী শ্রমিকেরা কেবল আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার ভান্ডার স্ফীত করছেন না, তাঁরা জাতীয় পতাকাবাহী বিমানের ব্যবসা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রেও ভূমিকা রাখছেন। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত ও নেপাল কম ভাড়ায় মধ্যপ্রাচ্যে যাত্রী বহন করতে পারলে বাংলাদেশ পারবে না কেন?