খুলনা বিভাগের প্রায় ৮৮ শতাংশ জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসম্মত ল্যাট্রিন সুবিধা নিশ্চিত হওয়ার বিষয়টি নিঃসন্দেহে একটি খুশির খবর। আগে যেখানে দেশে ল্যাট্রিন বলতে কিছু ছিল না, সেখানে একটি বিভাগের ৮৮ শতাংশ মানুষের স্বাস্থ্যসম্মত ল্যাট্রিন ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারাটা বড় ধরনের অগ্রগতি বটে।
প্রথম আলোর খবরে প্রকাশ, জাতীয় স্যানিটেশন মাস ও বিশ্ব হাত ধোয়া দিবস উপলক্ষে খুলনা জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে গত মঙ্গলবার আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে খুলনা বিভাগের স্যানিটেশন ব্যবস্থার চিত্র তুলে ধরা হয়। এতে জানানো হয়, খুলনা বিভাগের চুয়াডাঙ্গা জেলায় শতভাগ মানুষ স্বাস্থ্যসম্মত ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে পিছিয়ে আছে কুষ্টিয়া জেলা। মাত্র ৭৮ শতাংশ মানুষ স্বাস্থ্যসম্মত ল্যাটিন ব্যবহার করে। খুলনায় এ হার ৮৩ শতাংশ। ঝিনাইদহে এই হার ৯০ দশমিক ২৫ শতাংশ, বাগেরহাটে ৯৮ দশমিক ১২ শতাংশ, মাগুরায় ৯৪ শতাংশ, সাতক্ষীরায় ৯৯ শতাংশ, যশোরে ৯৩ দশমিক ৭৯ শতাংশ, মেহেরপুরে ৯৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ এবং নড়াইলে ৯৩ দশমিক ১৪ শতাংশ। অনুষ্ঠানে আরও জানানো হয়, বর্তমানে দেশের ৭১ শতাংশ মানুষ মানসম্মত স্যানিটেশন সুবিধার আওতায় আছে। আর দেশের শতভাগ জনগোষ্ঠী কোনো না কোনো ধরনের ল্যাট্রিন ব্যবহার করছে।
আমাদের স্যানিটেশন ব্যবস্থার অতীত ইতিহাস বড়ই করুণ। অতীতে স্যানিটেশন ব্যবস্থা বলতে কিছুই ছিল না। মানুষ খোলা জায়গায় মলমূত্র ত্যাগ করতে অভ্যস্ত ছিল। বাড়িতে বাড়িতে ছিল ঝুলন্ত পায়খানা। পাটকাঠি, শণ কিংবা ছালাঘেরা এসব পায়খানা থেকে মলমূত্র পড়ত উন্মুক্ত স্থানে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে জীবনযাত্রার মানের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে স্যানিটেশন ব্যবস্থার পরিবর্তন ঘটেছে। মলমূত্র ত্যাগ, ময়লা পানি এবং আবর্জনা পরিষ্কারের সঠিক উপায় বা নিরাপদ স্যানিটেশন সম্পর্কে জনসচেতনতা সৃষ্টির জন্য সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে গ্রহণ করা হয় নানা উদ্যোগ ও পরিকল্পনা। এসব উদ্যোগ যে অনেকখানি সফল হয়েছে, তা তো বোঝাই যাচ্ছে। টয়লেট নির্মাণে জোর প্রচারণা এবং প্রকাশ্যে মলত্যাগের কুফল সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করার মাধ্যমে এ সফলতা এসেছে৷
কিন্তু তারপরও দেখা যাচ্ছে, সারা দেশের প্রায় ২৯ শতাংশ মানুষ মানসম্মত স্যানিটেশন সুবিধার আওতায় নেই। এই ২৯ শতাংশ মানে প্রায় ৫ কোটি মানুষ। এত বিপুলসংখ্যক মানুষের মানসম্মত স্যানিটেশন সুবিধা নিশ্চিত করার জন্য সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে ব্যাপক প্রচারণা দরকার। মানুষকে এ বিষয় ভালো করে বোঝাতে হবে যে সুস্থ জীবনের প্রধান শর্তই হচ্ছে মানসম্মত ল্যাট্রিন। মানববর্জ্য ব্যবস্থাপনার দিকেও সরকারকে নজর দিতে হবে। বর্তমানে গ্রামাঞ্চলে যে ল্যাট্রিনগুলো ব্যবহার করা হয়, তা অল্প দিনের মধ্যেই বর্জ্যে ভরে যায়। সেগুলো যদি খোলা জায়গা বা নদী-জলাশয়ে ফেলা হয়, তা খোলা জায়গায় মলত্যাগেরই সমার্থক। তাই এসব বর্জ্য দিয়ে সার ও বায়োগ্যাস উৎপাদনের উদ্যোগ নিতে হবে সরকারকে। তবেই নিশ্চিত হবে মানসম্মত স্যানিটেশন ব্যবস্থা।