স্বীকার করতেই হবে, শাহপুরবাসীর বুদ্ধি আছে। নিচু জমি ভরাট করার এমন কৌশল কে কবে শুনেছে। বিষয়টা ভালো করে বোঝার জন্য পরিপ্রেক্ষিতটা একটু জানা দরকার। মৌলভীবাজারের জুড়ীর শাহপুর গ্রামের অনেকখানি জমি পতিত পড়ে ছিল। বছরের বেশির ভাগ সময় জলমগ্ন থাকে বলে এখানে কোনো চাষবাস করা যায় না। মাটি দিয়ে ভরাট করতে পারলেই শুধু জমিটাকে অর্থকরী করা সম্ভব। কিন্তু বাইরে থেকে মাটি কিনে কাজটা করতে গেলে খাজনার চেয়ে বাজনা বেশি হয়ে যাবে। স্বল্প খরচে কাজটা কীভাবে করা যায় ভাবতে বসেই হঠাৎ গ্রামবাসীর মাথায় আসে, আরে, পাশেই তো কণ্ঠিনালা। নদীতে প্রচুর পলি। বাঁধ দিয়ে নদীটাকে যদি এই জমিতে এনে ফেলা যায়, তাহলেই তো কেল্লা ফতে। নদীর পলিতেই ভরাট হয়ে যাবে জমি। তখন অনায়াসে তাতে ফলানো যাবে ফসল।
কিন্তু এ জন্য তো টাকা লাগবে। বাঁধ দিতে হবে, খাল কাটার জন্য জমি লাগবে। সব মিলিয়ে প্রায় ২০ লাখ টাকার মামলা। জায়ফরনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের সার্বিক সহযোগিতায় টাকাটা তুলে দুই মাস আগে মাটি কেটে বাঁধ দিয়ে নদীর গতিপথ পাল্টে ফেলেছে তারা।
এত বড় একটা অনিয়ম যে হয়ে গেল, তা হয়তো এলাকার বাইরের কেউ জানতই না, যদি না তাৎক্ষণিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতো নদীর অপর পারের বাসিন্দারা। বাঁধ দেওয়ার কারণে পানিশূন্য হয়ে গেছে পাশের বেলাগাঁও, সেচের অভাবে নিষ্ফলা হওয়ার উপক্রম তাদের ফসলি জমি। বাঁধ অপসারণের দাবিতে তাই বাঁধের ওপর দাঁড়িয়েই মানববন্ধন করেছে শাহপুরবাসী। আর এভাবেই বিষয়টা সম্পর্কে অবহিত হয়েছে বাইরের লোকজন।
সবচেয়ে আমাদের যা অবাক করেছে, তা হচ্ছে কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা। দুই মাস ধরে কাজটা করেছে তারা। উপজেলা পরিষদের মাসিক সভায় বিষয়টা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বাঁধ দেওয়ার জন্য টাকা তোলা হয়েছে, জমি কেনা হয়েছে, মাটি কাটা হয়েছে। তারপরও বিষয়টা জানত না বলে দাবি করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
কর্তৃপক্ষীয় এই উদাসীনতার সুযোগ নিয়ে একদিন কারও হয়তো মনে হবে, নদীটাই তো অকেজো পড়ে আছে। মাটি দিয়ে ভরাট করে ফেলতে পারলে কী সুন্দর চাষাবাদ করা যায়। বানানো যায় ঘরবাড়ি। কারও হয়তো মনে হবে পাহাড়গুলো শুধু শুধু অনেকগুলো জমি নষ্ট করছে, সমান করে ফেলি।
তত দিন পর্যন্ত আমরা কি নাকে তেল দিয়ে ঘুমাতেই থাকব?