করোনার কারণে অনেক উন্নয়নকাজই বাধাগ্রস্ত হয়েছে। কাজ থেমে গেছে, গতি কমে গেছে। লকডাউন শিথিল বা উঠে যাওয়ার পর নতুন কাজ শুরু হলেও স্বাভাবিকভাবেই অনেক প্রকল্প নির্ধারিত সময়সীমা মেনে চলতে পারবে না।
সেদিক থেকে ব্যতিক্রম কুমারখালী পৌরসভার পাঁচটি উন্নয়ন প্রকল্প। করোনকালেই তারা এই উন্নয়ন প্রকল্পগুলো শেষ করেছে। তবে এর চেয়ে বড় ব্যতিক্রমী বা অনন্য যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে এই পৌরসভা তা হচ্ছে, এই কাজগুলো হয়েছে দরপত্র ছাড়া। এই পাঁচ উন্নয়ন প্রকল্পে কত খরচ হয়েছে, কেউ তা জানে না। এমনকি কোন প্রকল্পের আওতায় এসব উন্নয়নকাজ হয়েছে, তা–ও কেউ জানে না। ‘অনন্য’ দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী এই পৌরসভাকে অভিনন্দন না জানানো ছাড়া কোনো উপায় আছে কি!
তবে পৌরসভা নয়, এই কৃতিত্ব আসলে এককভাবে পাওয়া উচিত পৌর মেয়র শাসসুজ্জামান অরুণের। কারণ, এই ‘উন্নয়নকাজ’ তিনি একাই করেছেন। পৌরসভায় কাউন্সিলররা আছেন, তাঁরা অভিযোগ করেছেন, এই কাজগুলোর ব্যাপারে তাঁরা কিছুই জানেন না। তাঁরা বলেছেন, সরকারি উন্নয়নকাজের ক্ষেত্রে সভা করে রেজল্যুশন নিতে হয়, দরপত্র আহ্বান করতে হয় এবং এর মাধ্যমে ঠিকাদার নিয়োগ করে কাজ করতে হয়। কিন্তু পাঁচ উন্নয়নকাজের ক্ষেত্রে তা হয়নি।
এই পাঁচ উন্নয়নকাজের আওতায় কুমারখালী থানার সামনে ফোয়ারা, পৌর বাস টার্মিনাল সংস্কার, দুটি সড়ক নির্মাণ ও মন্দির সংস্কারের কাজ হয়েছে। এই প্রকল্পগুলোতে গিয়ে প্রথম আলোর প্রতিবেদক দেখেছেন সব কটির কাজ শেষ হয়েছে। পৌরসভার প্রকৌশল দপ্তরের সার্ভেয়ার বলেছেন, কোনো কাজেরই দরপত্র এখনো আহ্বান করা হয়নি, তবে হবে। কাজ শেষ, এখন নাকি দরপত্র হবে।
এই কাজগুলোর যেহেতু কোনো দরপত্র হয়নি, প্রকল্প নেওয়া হয়নি, তাই সব মিলিয়ে কত খরচ হয়েছে, তারও কোনো হিসাব নেই। প্রথম আলোর প্রতিনিধি এ ধরনের কাজের অভিজ্ঞতা আছে, এমন প্রকৌশলীদের সঙ্গে কথা বলে আনুমানিক যে ব্যয় পেয়েছেন, তার পরিমাণ ৩০ থেকে ৪০ লাখ টাকা হবে।
এখন গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হচ্ছে, পাঁচটি উন্নয়নকাজে এই যে অর্থ খরচ হলো, এর উৎস কী? এটা কি পৌরসভার তহবিল থেকে গেছে, নাকি মেয়র তাঁর নিজের পকেট থেকে দিয়েছেন? নাকি অন্য কোনো উৎস আছে? এ ব্যাপারে মেয়র নিজেও কিছু খোলাসা করেননি। বলেছেন, কত টাকার কাজ, সেটা জানা নেই।
এভাবেই দেশের একজন মেয়র তাঁর পৌরসভা পরিচালনা করছেন। এসব দেখভালের দায়িত্ব স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের। তারা আদৌ কোনো ব্যবস্থা নেবে কি? আমরা অপেক্ষায় আছি।