শরীয়তপুর, রাজবাড়ী ও মাদারীপুরে পদ্মার ভাঙনে আবাদি জমি, বসতবাড়ি, বিদ্যালয়, স্বাস্থ্যকেন্দ্রসহ কয়েক শ স্থাপনা বিলীন হওয়ার খবরে আমরা বেদনাহত ও উদ্বিগ্ন। সবচেয়ে ভয়ংকর খবর হচ্ছে পদ্মার তীব্র স্রোতে শরীয়তপুরের নড়িয়া ও জাজিরায় হাজার কোটি টাকার বাঁধেও ধস দেখা দিয়েছে। বোঝাই যাচ্ছে, এই তিন জেলার বাসিন্দারা এখন এক বিরাট প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মুখোমুখি। তাঁদের পাশে দাঁড়ানো প্রয়োজন, এই বিপর্যয় থেকে তাঁদের উদ্ধার করতে আশু ও দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।
প্রথম আলোর খবর অনুযায়ী, গত এক সপ্তাহে পদ্মা নদীর ভাঙনে মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার বন্দরখোলা, কাঁঠালবাড়ি ও চরজানাজাত ইউনিয়নে নদীভাঙনে বিদ্যালয়, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, কয়েক শ দোকান ও বসতঘর বিলীন হয়েছে। পাঁচ শতাধিক দোকান, ঘরবাড়ি সরিয়ে অন্যত্র আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছেন ভাঙনকবলিত লোকজন। চরজানাজাত ইউনিয়নের দুটি বিদ্যালয় অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। ভাঙনের মুখে রয়েছে চারটি বিদ্যালয়, ইউনিয়ন পরিষদ ভবন, কমিউনিটি ক্লিনিকসহ বহু স্থাপনা। রাজবাড়ীর গোয়ালন্দের দৌলতদিয়া ও দেবগ্রাম ইউনিয়নে ১০ দিন ধরে নদীভাঙনের মাত্রা বেড়েছে। এর মধ্যেই ১০০ বসতভিটা এবং শতাধিক বিঘা কৃষিজমি বিলীন হয়েছে। ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে আরও চার শতাধিক পরিবার। শরীয়তপুরের হাজার কোটি টাকার বাঁধের ৪০ মিটার অংশে ধস দেখা দেওয়ায় ৫৮টি পরিবার ওই স্থান থেকে সরে গেছে। আর গত বৃহস্পতিবার রাতে ১২টি বসতঘর বিলীন হয়েছে।
নদীমাতৃক বাংলাদেশে ‘নদীভাঙন’ একটি বাস্তবতা। বর্ষা এলে দেশের নদীসংলগ্ন এলাকাগুলো নদীভাঙনের মুখে পড়ে। এর মধ্যে পদ্মা নদীর ভাঙন সবচেয়ে ভয়ংকর। পদ্মার ভাঙন নিয়ে গত বছর একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল মার্কিন মহাকাশ গবেষণা প্রতিষ্ঠান নাসা। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পদ্মার ভাঙনে ১৯৬৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৬৬ হাজার হেক্টরের বেশি জমি বিলীন হয়েছে। গবেষকেরা মনে করেন, পদ্মা নদীর তীব্র ভাঙনের দুটি প্রধান কারণ রয়েছে। প্রথমত, এটি একটি প্রাকৃতিক, মুক্তভাবে প্রবাহিত নদী, যার পাড় রক্ষায় কোনো সুব্যবস্থা নেই বললেই চলে। দ্বিতীয়ত, নদীটির দুই ধারে বালুচর রয়েছে, যা দ্রুত ভাঙতে পারে। তবে আমাদের কথা হচ্ছে ভাঙনের পেছনে যা-ই কারণ থাকুক না কেন, তা রোধ করতে হবে।
ভাঙন রোধে সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। নদীর গতিপথ পরিবর্তন করতে পারলে ভাঙন রোধ করাও সম্ভব। সে জন্য সরকারকে বড় ধরনের পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। তবে এই মুহূর্তে করণীয় হচ্ছে ভাঙনের মুখে বিপর্যস্ত মানুষগুলোর পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা। যাঁরা ঘরবাড়ি হারিয়েছেন, তঁাদের আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা দরকার। জীবিকা হারিয়ে যঁাদের জীবনযাপন কষ্টকর হয়ে উঠেছে, তঁাদের আর্থিক সহযোগিতা দিতে হবে।