ফুলের মূল্য কত—এই প্রশ্ন দ্ব্যর্থক। কারণ ‘ফুলের মূল্য’ বললে ফুলের আর্থিক মূল্য এবং তাৎপর্যগত মূল্য—দুটোই সমান গুরুত্ব নিয়ে মানুষের মানসপটে ভাসে। ফুলের তাৎপর্যগত মূল্যকে আর্থিক মূল্যে রূপান্তরের রোমান্টিক প্রত্যয় থেকেই হয়তো কবি শহীদ কাদরী লিখেছিলেন, ‘ভয় নেই, আমি এমন ব্যবস্থা করব, স্টেট ব্যাংকে গিয়ে গোলাপ কিম্বা চন্দ্রমল্লিকা ভাঙালে অন্তত চার লক্ষ টাকা পাওয়া যাবে। একটি বেলফুল দিলে চারটি কার্ডিগান।’ কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। দেখা যাচ্ছে জীবনকে উপভোগ্য করা ফুলের চেয়ে জীবনঘাতী তামাকের আর্থিক মূল্য বেশি। আর সে কারণেই কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার বরইতলী এখন ‘গোলাপের গ্রাম’ থেকে তামাকের গ্রামে পরিণত হওয়ার দিকে যাচ্ছে। সেখানে গোলাপের রাজ্যে চলছে তামাকের আগ্রাসন।
প্রথম আলোর প্রতিবেদন বলছে, বরইতলী গ্রামে আগে যেখানে গোলাপের চাষ হতো, এখন সেখানে তামাক চাষ শুরু হয়েছে। বরইতলী ইউনিয়নের সাতটি গ্রামে বর্তমানে ৫০ একর জমিতে গোলাপের চাষ হচ্ছে। এখানে তামাকের চাষ আগে হতো না। এখন সেখানে পাঁচ একর জমিতে তামাক চাষ হচ্ছে। চাষিরা বলছেন, বাজারে কাগজের ফুল ও চীনা ফুলের কদর বেড়ে যাওয়ায় আসল গোলাপের চাহিদা কমে গেছে। এ কারণে প্রতিবছর লোকসানের মুখে পড়ছেন চাষিরা। অন্যদিকে তামাকে গোলাপ চাষের চেয়ে লাভ বেশি। এ কারণে চাষিরা ফুল চাষ ছেড়ে তামাক চাষে ঝুঁকে পড়ছেন। ওই এলাকার জমিতে গ্লাডিওলাস, গোলাপ, চায়না গাঁদা, হলুদ গাঁদা, জারবেরা, জিপসিসহ নানান প্রজাতির ফুলের চাষ হয়। দুই বছর আগেও যেখানে গোলাপ ও গ্লাডিওলাস ফুলের চাষ হতো, এখন সেখানে তামাকের চাষ করা হচ্ছে।
কৃষকদের মধ্যে তামাক চাষের প্রবণতা বেড়ে যাওয়ায় আশঙ্কা করা হচ্ছে, এভাবে চলতে থাকলে ‘গোলাপের গ্রাম’ কয়েক বছরের মধ্যেই ‘তামাকের গ্রাম’ হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠবে।
যেহেতু গোলাপের সৌরভ কৃষকের জঠর জ্বালা মেটাতে অক্ষম, সেহেতু আরেকটু লাভের আশায় কৃষক তামাক চাষে ঝুঁকবেনই। কিন্তু ফুল চাষে কৃষকদের সরকারিভাবে ভর্তুকি বা প্রণোদনা দেওয়া এবং ফুল বিপণনে তাঁদের বিশেষ সহায়তা দেওয়া গেলে গোলাপের বাগানে তামাকের আগ্রাসন ঠেকানো সম্ভব হবে। স্থানীয় কৃষি পরিবেশ ও জাতীয় জনস্বাস্থ্যের বৃহত্তর স্বার্থের কথা বিবেচনায় নিয়ে এটি করা দরকার।