সার্বক্ষণিক তদারকি ছাড়া ফল মিলবে না

ঢাকার খাল উদ্ধার

সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

ঢাকা ওয়াসার কাছ থেকে রাজধানীর খাল উদ্ধার ও পানিনিষ্কাশনের দায়িত্ব দুই সিটি করপোরেশনের (ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ) কাছে ন্যস্ত করার দেড় মাসের মধ্যে উদ্ধারকাজে দৃশ্যমান অগ্রগতি আশাপ্রদ। আগে ঢাকা মহানগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনের দায়িত্ব ছিল ঢাকা ওয়াসার এবং প্রতিবছর এ খাতে তারা কোটি কোটি টাকা খরচ করলেও খালগুলো ভরাট হয়ে যাচ্ছিল, বর্ষা মৌসুমে দেখা দিচ্ছিল জলাবদ্ধতা। এ অবস্থায় গত ৩১ ডিসেম্বর দুই সিটি করপোরেশনের ওপর খাল উদ্ধারের দায়িত্ব দেওয়া হয়।

২২ ফেব্রুয়ারি প্রথম আলোর প্রতিবেদনে বলা হয়, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ইব্রাহিমপুর খাল, রামচন্দ্রপুর খাল, গোদাগাড়ী খাল, রূপনগর খাল, সাগুফতা খালসহ ১৪টি খাল থেকে গত দেড় মাসে ৯ হাজার ৩০০ টন বর্জ্য অপসারণ করেছে। অন্যদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটির করপোরেশন জিরানী খাল, মান্ডা খাল, শ্যামপুর খাল, কদমতলা খাল, কমলাপুর খালসহ দুটি বক্স কালভার্ট থেকে গত দেড় মাসে ২১ হাজার ৪৭ টন বর্জ্য অপসারণ করেছে। উদ্ধার অভিযানের কারণে অনেক খাল আগের অবস্থায় ফিরে এসেছে। আগামী বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতার ভোগান্তি থেকে নগরবাসী মুক্তি পাবেন বলে আশা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের।

রিভার অ্যান্ড ডেল্টা রিসার্চ সেন্টারের ২০২০ সালের জরিপ অনুযায়ী, ঢাকায় ৭৩টি খাল আছে। ২০১৬ সালে করা ঢাকা জেলা প্রশাসনের সর্বশেষ জরিপ বলছে, খালের সংখ্যা ৫৮টি। সে সময় জেলা প্রশাসনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, উল্লিখিত খালের ৩৭টিতেই দখলদার রয়েছে। দখল ও দূষণের কারণে খাল স্বাভাবিক প্রবাহ হারিয়েছে। কোনো কোনোটি পুরোপুরি ভরাট হয়ে গেছে।

সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, খাল দখলমুক্ত ও বর্জ্য অপসারণের কাজে গত দেড় মাসে ১ কোটি ৪১ লাখ টাকা খরচ হয়েছে।

দুই সিটি করপোরেশন নিজস্ব তহবিল থেকে এর জোগান দিয়েছে। খাল ও নালার রক্ষণাবেক্ষণে সরকারের কাছে ২৬১ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়েছে দুই প্রতিষ্ঠান। আগে খাল রক্ষণাবেক্ষণে ঢাকা ওয়াসার নিজস্ব বরাদ্দ ছিল না। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে ওয়াসা এ খাতে বছরে ৪০ থেকে ৬০ কোটি টাকা পেত। নগরবিদেরা সিটি করপোরেশন দুটির খাল উদ্ধার কার্যক্রমকে স্বাগত জানিয়েছেন। একই সঙ্গে তাঁরা তদারকি বাড়ানোর ওপর জোর দিয়েছেন। অন্যথায় খালগুলো ফের দখলের শিকার হবে। খাল উদ্ধারের পাশাপাশি এর দুই পাড় সংরক্ষণের জন্য সমন্বিত পরিকল্পনা নেওয়া জরুরি।

বর্ষার আগেই যাতে খালগুলো দখলমুক্ত করা যায়, সে ব্যাপারে দুই সিটি রপোরেশনকে তৎপর থাকতে হবে। বর্ষার সময় খাল উদ্ধারের কাজ করা যাবে না। খাল দখলের সঙ্গে স্থানীয় প্রভাবশালীরাই যুক্ত। ওয়াসা সরকারি প্রতিষ্ঠান। সিটি করপোরেশন নির্বাচিত প্রতিষ্ঠান। ফলে তাদের পক্ষে প্রভাবশালীদের উচ্ছেদ করা সহজ। আবার ভয়ও আছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি তথা কাউন্সিলররা যদি এসব খাল দখল ও দূষণের কাজে ব্যস্ত থাকেন, তাহলে সিটি করপোরেশনের কোনো উদ্যোগই সফল হবে না।

ওয়াসা যে কাজ স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে অর্থ নিয়েও পারেনি, সিটি করপোরেশন তা নিজস্ব অর্থায়নে করে দেখিয়েছে। এ জন্য তারা সাধুবাদ পেতে পারে। এ ক্ষেত্রে আরও একটি বিষয়ে নজর দেওয়া প্রয়োজন যে খাল উদ্ধারের সঙ্গে নদীর নাব্যতার প্রশ্নটি অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। নদী ভরাট থাকলে খালের পানি সরবে না, জলাবদ্ধতাও কমবে না।