জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলা নয়

ডেঙ্গু নিরোধ কর্মসূচি

মশা নিয়ে পরস্পরবিরোধী কথা বলছেন সরকারের মন্ত্রী ও সিটি করপোরেশনের দুই মেয়রও। আবার কেউ কেউ সংবাদমাধ্যমের ওপর দোষ চাপাতেও দ্বিধা করছেন না। তাঁদের ভাবখানা এমন যে সংবাদমাধ্যমের খবর দেখেই মশককুল ঢাকা শহরে বংশবৃদ্ধি করে চলেছে এবং মানুষের ওপর সংঘবদ্ধ আক্রমণ চালাচ্ছে। আসলে এসব হলো ব্যর্থতা ঢাকার অপকৌশলমাত্র। উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে না চাপিয়ে দুই সিটি করপোরেশন তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্বটি পালন করলে ডেঙ্গু নিয়ে নগরবাসীর দুশ্চিন্তা ও যন্ত্রণা কিছুটা হলেও কমত।

আইসিডিডিআরবির পরীক্ষায় দেখা গেছে, দুই সিটি করপোরেশন যে ওষুধ ছিটায়, তাতে এডিস মশা মরে না। গত বছরের ২২ মে সংস্থাটি এ-সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদনও দুই সিটি করপোরেশনকে দিয়েছিল। এরপর উত্তর সিটি করপোরেশন স্বীয় উদ্যোগে লিমিট অ্যাগ্রো প্রোডাক্টের লিকুইড ইনসেকটিসাইডের ব্যবহার বন্ধ করে দিলেও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন সেটাই ব্যবহার করে যাচ্ছে। তাদের দাবি, ওই ওষুধ কার্যকর আছে। যদি ওষুধ কার্যকরই হবে, তাহলে এত মানুষ আক্রান্ত হলো কেন? ডেঙ্গুর প্রকোপ নিয়ে বেশ আগে থেকে প্রথম আলোসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে বহু প্রতিবেদন প্রকাশিত হলেও সিটি করপোরেশন আমলে নেওয়ার প্রয়োজন বোধ করেনি। গবেষণায় পরীক্ষিত অকার্যকর ওষুধই তারা ছিটিয়ে আসছে। এমনকি উচ্চ আদালতের নির্দেশনাও তাঁরা উপেক্ষা করেছেন। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার বিচারপতি তারিক উল হাকিম ও বিচারপতি মো. সোহরাওয়ার্দীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে তলব করেছেন এবং মশক নিধনে অতি দ্রুত কার্যকর ওষুধ আনতে বলেছেন।

মানুষ মশা নিয়ে মন্ত্রী-মেয়রদের কথা শুনতে চায় না। তারা প্রতিকার চায়। সাধারণত জুলাই থেকে অক্টোবরকে ডেঙ্গু বিস্তারের সময় ধরা হয়। অর্থাৎ আমরা এখনো মৌসুমের প্রাথমিক পর্যায়ে আছি। যঁারা ইতিমধ্যে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন, তাঁদের দ্রুত ও কার্যকর চিকিৎসা করাতে হবে। তবে এর পাশাপাশি তঁাদের মাধ্যমে অন্য কারও শরীরে যাতে ডেঙ্গু না ছড়ায়, সে জন্য বসতবাড়ি কিংবা হাসপাতাল যেখানেই ডেঙ্গু রোগী থাকুক না কেন, আলাদা রাখতে হবে। ঢাকার একটি হাসপাতাল ডেঙ্গু রোগীদের মশারি টাঙিয়ে আলাদা করে রাখলেও অন্য হাসপাতালগুলো সেই রীতি অনুসরণ করছে না। বিশেষজ্ঞদের মতে, ডেঙ্গু রোগীকে কামড়ানো কোনো এডিস মশা অন্য কাউকে কামড়ালে খুব দ্রুত তার আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। দ্বিতীয় যে পদক্ষেপটি নেওয়া প্রয়োজন তা হলো ডেঙ্গু মশার প্রজননক্ষেত্রগুলো ধ্বংস করা। বাসাবাড়ির চেয়েও বেশি এডিস মশা জন্ম নেয় স্কুল, কোচিং সেন্টার ও হাটবাজারে, যেখানে অধিক সংখ্যক মানুষ থাকে। তাই কোনো জায়গায় একবার মশা ছিটালেই সেটাকে ডেঙ্গুমুক্ত বলা যাবে না।

আমরা দেখতে চাই, সিটি করপোরেশন আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী অবিলম্বে কার্যকর ওষুধ আনছে। একই সঙ্গে যাঁরা মশা মারার ওষুধ নিয়ে নয়ছয় করেছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিয়েছে। মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলার অধিকার কারও নেই।