সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলা

ডিজিটাল আইনের অপব্যবহার বন্ধ করুন

সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

একাত্তরের কথা নামে সিলেট থেকে প্রকাশিত এক দৈনিক সংবাদপত্রের মুদ্রিত ও অনলাইন সংস্করণে সিলেট সিটি করপোরেশনের ২২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ছালেহ আহমদের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর তিনি ওই সংবাদপত্রের প্রকাশক, সম্পাদক, প্রতিবেদকসহ ১৮ ব্যক্তির বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৫ ধারায় মামলা করেছেন। বহু নিন্দিত আইনটির অপব্যবহারের মাধ্যমে সাংবাদিকদের হয়রানি করার সর্বসাম্প্রতিক এ দৃষ্টান্তের প্রতি আমরা সরকারের নীতিনির্ধারকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই।

পৃথিবীর অন্যান্য গণতান্ত্রিক দেশের মতো বাংলাদেশেও একটা সময় ছিল, যখন সংবাদপত্রে প্রকাশিত কোনো প্রতিবেদন বা লেখায় কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান সংক্ষুব্ধ হলে ওই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান প্রতিকার চাইতে প্রথমে ওই সংবাদপত্রে একটি প্রতিবাদপত্র পাঠাত, সরাসরি মামলা করতে থানায় বা আদালতে ছুটত না। তাদের প্রতিবাদের পরিপ্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট সংবাদপত্র যে প্রতিকারমূলক পদক্ষেপ নিত, সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান তাতে সন্তুষ্ট না হলে তাদের প্রেস কাউন্সিলে যাওয়ার সুযোগ ছিল। প্রেস কাউন্সিল উভয় পক্ষের বক্তব্য শুনে, প্রকাশিত প্রতিবেদন বা লেখা এবং তার প্রতিবাদপত্র পর্যালোচনা করে একটি সিদ্ধান্তে পৌঁছাত। কাউন্সিল-সংশ্লিষ্ট সংবাদপত্রকে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বক্তব্য প্রকাশ করার আদেশ দিত, ভুলভ্রান্তি হয়ে থাকলে সতর্ক করত, এমনকি ভর্ৎসনা করারও নিয়ম ছিল।

কিন্তু সেই সব দিন এখন ইতিহাস। কিছুকাল আগপর্যন্ত তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় মামলা করে সাংবাদিকদের ব্যাপক হয়রানি চলেছে; এখন সেই আইনের জায়গা নিয়েছে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নামের এক মারাত্মক কালাকানুন। এর কয়েকটি ধারা সাংবাদিকতা পেশার জন্য বিরাট প্রতিবন্ধক হয়ে উঠেছে। সিলেটের উল্লিখিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর একাত্তরের কথা কর্তৃপক্ষের কাছে কোনো প্রতিবাদপত্র পাঠাননি, নগরীর শাহপরান থানায় মামলা করেছেন এবং থানা তাঁর অভিযোগের সারবত্তা খতিয়ে দেখার আগেই মামলাটি গ্রহণ করেছে। গ্রহণের একটা কারণ হতে পারে এই যে মামলার বাদী ছালেহ আহমদ শুধু সিটি কাউন্সিলের কাউন্সিলর নন, ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নগর শাখার একজন নেতাও বটে। তিনি মামলার এজাহারে অভিযোগ করেছেন, একাত্তরের কথা পত্রিকায় তাঁর সম্পর্কে প্রতিবেদন প্রকাশের ফলে ‘এলাকায় অস্থিরতা ও চরম বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হচ্ছে। সংবাদ প্রচার ও ফেসবুকে শেয়ার করে “ভাইরাল” করায় সামাজিক মূল্যবোধ ও অনুভূতিতে আঘাত হেনেছে।’

এই হাস্যকর রকমের ভিত্তিহীন অভিযোগে ওই কাউন্সিলরের করা মামলাটি নথিভুক্ত না করে শাহপরান থানার উচিত ছিল একাত্তরের কথা পত্রিকায় তাঁর কর্মকাণ্ড সম্পর্কে যেসব অভিযোগ প্রকাশিত হয়েছে, সেসবের দিকে দৃষ্টি দেওয়া। আমরা মনে করি, মামলাটি স্পষ্টতই হয়রানিমূলক এবং সেই কারণে তা বাতিল করা উচিত। সেই সঙ্গে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নামের কালাকানুন থেকে দেশের সাংবাদিকতা ও সংবাদমাধ্যমের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে এর সংশ্লিষ্ট ধারাগুলো সংশোধন করার দাবি জানাই।