উন্নয়নের নামে আর স্বেচ্ছাচারিতা নয়

ডিএসসিসি ও ডিএনসিসি

গত দুই দিনে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের উন্নয়ন প্রকল্পের নয়ছয় নিয়ে তিনটি খবর প্রকাশিত হয়েছে। একটি ঢাকা উত্তরের এবং দুটি ঢাকা দক্ষিণের। এর মধ্যে কোনো প্রকল্পের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কোনো প্রকল্পের ব্যয় প্রস্তাব নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে খোদ স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। আর তৃতীয় প্রকল্পের অতি জরুরি ও দামি যন্ত্রপাতি অকেজো অবস্থায় পড়ে আছে।

২৪ জুলাই প্রথম আলোর প্রথম পাতার খবরের শিরোনাম ছিল, ‘কার জন্য সাড়ে ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে এই সেতু’। খিলগাঁওয়ের মান্ডার শেষ মাথা এলাকায় যেখানে সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে, সেখানে জনবসতি ও সড়ক নেই। মেয়র সাঈদ খোকনের আমলে একটি বেসরকারি আবাসন প্রকল্পের মালিকদের সুবিধা করে দেওয়ার জন্য এ সেতু নির্মাণ করা হয় বলে অভিযোগ আছে। কেবল মান্ডার সেতু নয়, আরও ছয়টি সেতু নির্মাণের কাজও চলছিল প্রকল্পের আওতায়; যার কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন বর্তমান মেয়র ফজলে নূর তাপস।

এ ছাড়া দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) খাল খনন প্রকল্প নিয়ে শনিবার আরেকটি খবর প্রকাশ পায় প্রথম আলোয়। রাজধানীর চারটি খালের উন্নয়নে প্রায় ৯৩৮ কোটি টাকার প্রকল্প নিয়েছিল সংস্থাটি। প্রস্তাবিত প্রকল্পে গাড়ি কেনাকাটায় ২ কোটি, জ্বালানি বাবদ ১ কোটি, ব্যবস্থাপনায় ১ কোটি, যন্ত্রপাতি ভাড়ায় ২ কোটি, গ্যাস ও জ্বালানি বাবদ ১ কোটি, সেমিনার খাতে ৬০ লাখ, সম্মানী ভাতা ৫০ লাখ, অফিস সরঞ্জাম খাতে ৫০ লাখ, নিরাপত্তা সেবা সংগ্রহে ৫০ লাখ, কম্পিউটারসামগ্রী কেনাকাটায় ৫০ লাখ, আসবাব কেনাকাটায় ৫০ লাখ, আপ্যায়ন খরচ ২০ লাখ এবং মুঠোফোনে আলাপের জন্য ২০ লাখ টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। ডিএসসিসির কর্মকর্তাদের কাছে এসব বরাদ্দ অস্বাভাবিক মনে না হলেও মন্ত্রণালয় ফেরত পাঠিয়েছে ‘অতিরিক্ত খরচ’ দেখানোর কারণে। ডিএসসিসির কর্মকর্তারা খালের অতিরিক্ত খরচ কিংবা অপ্রয়োজনীয় সেতু প্রকল্প নিয়ে মোটেই ভাবিত নন। কেননা, টাকা তো তঁাদের পকেট থেকে যাবে না, দেবে জনগণ নামের গৌরী সেন।

ঢাকার বাসিন্দাদের সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে এক সিটি করপোরেশন ভেঙে দুই সিটি করপোরেশন করা হয়েছে। কিন্তু তাতে নগরবাসীর সুযোগ-সুবিধা না বাড়লেও ওই প্রতিষ্ঠান দুটির কর্তাব্যক্তিদের সুযোগ যে বেড়েছে, তা বিভিন্ন প্রকল্পের খরচ দেখেই বোঝা যায়।

তৃতীয় খবরটি ডেইলি স্টার-এর। এক বছর ছয় মাস আগে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে বহুতল ভবনের আগুন নেভানোর জন্য তিনটি টার্নটেবল ল্যাডার কিনেছে জার্মানি থেকে। প্রতিটি যন্ত্রের দাম ৯ কোটি টাকা। কয়েক মাস পর প্রকল্প বাস্তবায়ন তদারক ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) সরেজমিন পরিদর্শন করে দেখতে পায়, তিনটির মধ্যে দুটি ল্যাডার অলস বসে আছে অগ্নিনির্বাপণ সদর দপ্তরে। এর একটির ত্রুটি ধরা পড়েছে এবং অপরটি অংশত ক্ষতিগ্রস্ত। দুটোরই মেরামত প্রয়োজন। আইএমইডি না বললেও ডেইলি স্টার খোঁজখবর নিয়ে জেনেছে, তৃতীয়টিও অকেজো অবস্থায় আছে।

ঢাকার বাসিন্দাদের সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে এক সিটি করপোরেশন ভেঙে দুই সিটি করপোরেশন করা হয়েছে। কিন্তু তাতে নগরবাসীর সুযোগ-সুবিধা না বাড়লেও ওই প্রতিষ্ঠান দুটির কর্তাব্যক্তিদের সুযোগ যে বেড়েছে, তা বিভিন্ন প্রকল্পের খরচ দেখেই বোঝা যায়। তারা উন্নয়ন প্রকল্পে টাকা বাড়াতে এবং যন্ত্রপাতি কিনতে যতটা উৎসাহী, প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের জবাবদিহির আওতায় আনতে ততটাই নিরুৎসাহী। সেতু প্রকল্পের দায় ডিএসসিসির ‘সাবেকের’ ওপর চাপানো গেলেও খাল প্রকল্পের অতিরিক্ত খরচের দায় ‘বর্তমানকেই’ নিতে হবে। তিনটি ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও উন্নয়নের নামে স্বায়ত্তশাসিত এ দুটি প্রতিষ্ঠানে যাতে এ ধরনের স্বেচ্ছাচারিতা আর না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে।