ঢাকার বাসিন্দাদের নিরাপত্তা নিয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) উদ্বিগ্ন। গত সোমবার তাদের মাসিক অপরাধ পর্যালোচনা বৈঠকে ডিএমপি কমিশনার পরামর্শ দেন, যাঁরা ঈদের ছুটিতে ঢাকা ছাড়বেন, তাঁরা যেন আত্মীয়স্বজনের কাছে তাঁদের স্বর্ণালংকার রেখে যান। আর যাঁদের রাখার মতো আত্মীয়স্বজন নেই, তাঁরা নিকটবর্তী থানায়ও তা রেখে যেতে পারবেন।
ঈদের সময় ঘরবাড়ি যেহেতু ফাঁকা থাকবে, সেহেতু মূল্যবান জিনিসপত্র বাসায় না রাখাই ভালো। অনেকে তা আত্মীয়স্বজনের কাছে রেখেও যান। এরপরও ঈদের সময় চুরি-ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। কেননা বাসা–বাড়িতে স্বর্ণালংকার ছাড়া অনেক দামি জিনিসও থাকে (টিভি, ফ্রিজ এয়ারকুলার, কম্পিউটার ইত্যাদি)। এগুলো আত্মীয়স্বজন কিংবা থানায় রেখে যাওয়া সম্ভব নয়। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সড়ক দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের এক গবেষণায় বলা হয়েছে, এবার ঈদের আগের ৪ দিনে ১ কোটি ২০ লাখ মানুষ ঢাকা ছাড়তে পারেন। অর্থাৎ ওই সময় প্রতিদিন গড়ে ৩০ লাখ লোক ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়িতে যাবেন। সে ক্ষেত্রে ঢাকা শহর অনেকটা ফাঁকা হয়ে যাবে।
ডিএমপি কমিশনারের পরামর্শ কারও সম্পদকে রক্ষা করার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে পারে, কিন্তু সার্বিকভাবে রাজধানীর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কী অবস্থায় আছে এবং ছিনতাইকারী বা চোর-ডাকাত চক্রকে নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব তো তাদেরকেই নিতে হবে। ডিএমপির সদর দপ্তরের বরাত দিয়ের প্রথম আলোর খবরে বলা হয়, মহানগরের ৫০টি থানা এলাকার ৫৭৫টি স্থানে ৫০০ ছিনতাইকারী সক্রিয়। এর বাইরে অজ্ঞান পার্টি, মলম পার্টি, টানা পার্টি তো আছেই। এই অপরাধী চক্রের অনেকের নামে থানায় একাধিক মামলা আছে। কিন্তু থানা-পুলিশ রহস্যজনক কারণে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয় না। অভিযোগ আছে, থানা-পুলিশের একশ্রেণির কর্মকর্তার সঙ্গে অপরাধী চক্রের সঙ্গে যোগসাজশ থাকে। আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে সোনাদানা রেখে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়ার মতো সহজ কাজের চেয়ে আসল কাজটি হচ্ছে চিহ্নিত ছিনতাইকারী ও পেশাদার চোরদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া।
ডিএমপি কমিশনার অবশ্য বলেছেন, কেবল পাহারা দিয়ে অপরাধ দমন করা যায় না। অপরাধীদের গ্রেপ্তার করে অপরাধ দমন করতে হবে। কিন্তু ঢাকা মহানগরে যে ৫০টি থানা, তারা কি সেই কাজ ঠিকমতো করছে? করছে না বলেই চুরি-ছিনতাইয়ের ঘটনা বাড়ছে। গত জানুয়ারি মাসে ডিএমপির বৈঠকেও রাজধানীতে চুরি-ছিনতাই বেড়ে যাওয়ার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছিল। এরপরও ঢাকা মহানগরীতে অপরাধীদের দৌরাত্ম্য কমেনি। গত ২৭ মার্চ মিরপুরের শেওড়াপাড়ায় দন্তচিকিৎসক আহমেদ মাহি বুলবুল ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে নিহত হন। ছিনতাইকারীদের হাতে এভাবে মানুষের মৃত্যু অহরহই ঘটে চলেছে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যখন জানে কোন কোন স্থানে ছিনতাই হয়, তারা সেসব স্থানে টহল বাড়ায় না কেন? হাতেনাতে ধরা পড়ার পরও অনেক ছিনতাইকারী আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে বেরিয়ে আসে। আবার অনেক সময় থানা-পুলিশ ছিনতাইয়ের মামলাই নিতে চায় না। তারা ভুক্তভোগীদের হারিয়ে যাওয়ার মামলা করার পরামর্শ দেন।
কেবল ঢাকা নয়, ঈদ সামনে রেখে অন্যান্য শহরের পাশাপাশি যাত্রীবাহী বাস-মিনিবাস, বেবিট্যাক্সি, মাইক্রো ও লঞ্চে ছিনতাইয়ের ঘটনা বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বিশেষ করে এ সময় অনেক নিরীহ মানুষ মলম পার্টি, টানা পার্টি, অজ্ঞান পার্টির কবলে পড়ে সর্বস্বান্ত হন। এ অবস্থায় কেবল পরামর্শই যথেষ্ট নয়। আমরা আশা করব, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জনজীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে টহল জোরদার করার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেবে।