ডাকসুর সহসভাপতি (ভিপি) নুরুল হকের ওপর ফের হামলা হয়েছে। গত রোববার যখন তিনি সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের সদস্যদের নিয়ে ডাকসু ভবনে অবস্থান করছিলেন, তখনই দফায় দফায় তাঁর ওপর সন্ত্রাসী হামলা চালানো হয়। এতে ডাকসু ভিপিসহ ৩০ জন আহত হন। হামলাকারীরা শুধু ডাকসু ভিপি ও তাঁর সমর্থকদের ওপর চড়াও হননি, তাঁরা ডাকসু ভবন ভাঙচুরও করেছেন। আমরা এই হামলার তীব্র নিন্দা জানাই এবং হামলাকারীদের শাস্তি দাবি করছি।
সংবাদপত্রে প্রকাশিত খবর ও প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য অনুযায়ী, ভিপি নুরুল হক ও তাঁর সমর্থকদের তাঁর কক্ষে ঢুকে আলো নিভিয়ে পেটান মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের নেতা-কর্মীরা। এই মঞ্চের অনেকে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী। প্রথমে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের একাংশের সভাপতি আমিনুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক আল মামুনের নেতৃত্বে সংগঠনের নেতা-কর্মীরা ডাকসু ভবনে ঢুকে হামলা চালান। এরপর ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সঞ্জিত চন্দ্র দাস ও সাধারণ সম্পাদক (ডাকসুর এজিএস) সাদ্দাম হুসাইন ঘটনাস্থলে আসেন। তাঁদের উপস্থিতিতে দ্বিতীয় দফায় হামলা ও মারধর করা হয়। তাঁরা সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক এ পি এম সুহেলকে ডাকসু ভবনের ছাদ থেকে ফেলে দেন। হামলায় গুরুতর আহত পরিষদের আরেক যুগ্ম আহ্বায়ক তুহিন ফারাবীকে হাসপাতালে ২০ ঘণ্টা লাইফ সাপোর্টে রাখতে হয়েছে। সোমবার সকালে তাঁর লাইফ সাপোর্ট খুলে দেওয়া হয়েছে এবং তিনি আশঙ্কামুক্ত বলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক জানিয়েছেন।
ডাকসু ভবনে এই ন্যক্কারজনক হামলা হলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বরাবরের মতো নির্বিকার ছিল। ডাকসু ভবনের নিকটবর্তী কলাভবনের নিচতলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের কার্যালয় এবং প্রক্টর গোলাম রাব্বানী হামলার সময় তাঁর কার্যালয়েই ছিলেন। অথচ তিনি ঘটনাস্থলে যান হামলার ঘটনা শেষ হওয়ার পর। আর উপাচার্য আখতারুজ্জামান রাতে হাসপাতালে আক্রান্তদের দেখতে গিয়ে তাঁর দায়িত্ব সম্পন্ন করেছেন। আক্রমণকারীদের সম্পর্কে একটি কথাও বলেননি। উপাচার্য পদাধিকারবলে ডাকসুর সভাপতি। তাঁরই সংসদের নির্বাচিত সহসভাপতি চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের হাতে মার খেলেও তিনি কোনো ব্যবস্থা নেননি। ১৮ ডিসেম্বর ভিপি নুরুল হক ভারতের নাগরিক আইন সংশোধনের প্রতিবাদে কর্মসূচি নিলে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের নেতা-কর্মীরা তাঁর ওপর চড়াও হন।
ডাকসুর ভিপি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৩ হাজার শিক্ষার্থীর নির্বাচিত প্রতিনিধি। তাঁর রাজনৈতিক মতের সঙ্গে কারও দ্বিমত থাকতে পারে, কেউ পাল্টা কর্মসূচিও নিতে পারেন। কিন্তু তাই বলে ডাকসুর ভিপি কোনো কর্মসূচি নিলে কিংবা কোনো বিষয়ে কথা বললেই তাঁর ওপর সর্বশক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়া কেন? তিনি আইনবিরুদ্ধ কিছু করলে সরকার তাঁর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে পারে। আদালতের আশ্রয় নিতে পারে। সেসব না নিয়ে তাঁর ওপর হামলার অর্থ হলো ভিন্নমত ও কণ্ঠকে স্তব্ধ করে দেওয়া।
এই সম্পাদকীয় লেখার সময়ে জানা গেল, ডাকসুর ভিপির ওপর হামলার দায়ে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের দুই নেতাকে আটক করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানাই। সেই সঙ্গে এ–ও স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, রোববার শুধু মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের দুজন নেতা হামলার ঘটনা ঘটাননি, এর সঙ্গে ছাত্রলীগের বেশ কয়েকজন নেতাও জড়িত ছিলেন। ক্যাম্পাসে দুর্বৃত্তায়ন লালন ও বিচারহীনতার কারণেই ডাকসুর ভিপির ওপর দুর্বৃত্তরা বারবার হামলা করেছে। অপসংস্কৃতির অবসান এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হলে হামলার সঙ্গে জড়িত সবাইকে গ্রেপ্তার করে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে।