কক্সবাজারের টেকনাফের কথা উঠলেই রোহিঙ্গা সংকট, ইয়াবা ও চোরাকারবারি প্রসঙ্গ চলে আসাটা একধরনের অভ্যাসের মতো দাঁড়িয়ে গেছে। পাশেই মিয়ানমার। স্থানীয় মানুষ দীর্ঘদিন ধরে নাফ নদীর ওপার থেকে দেদার ইয়াবা ও অন্যান্য মাদক আসতে দেখে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে। এখানকার বহু লোক চোরাকারবারিদের সঙ্গে আঁতাত করে অপরাধমূলক তৎপরতা চালিয়ে এসেছে। কিন্তু সরকারের একটি উদ্যোগ স্থানীয় মানুষের জীবনযাত্রা বদলে দিতে শুরু করেছে। উদ্যোগটি আক্ষরিক অর্থে টেকনাফজুড়ে আলো ছড়াচ্ছে।
সেই আলোয় রাতের নিকষ অন্ধকারের পাশাপাশি সামাজিক অপরাধজনিত অন্ধকারও অপসৃত হচ্ছে। মানুষের প্রাত্যহিক জীবনে আসছে গতি ও চাঞ্চল্য। উদ্যোগটির আওতায় দেশের সবচেয়ে বড় সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্র গড়ে উঠেছে টেকনাফে। বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধানে এই প্রকল্প চলতি মাসেই চালু হয়েছে। যুক্তরাজ্যের প্রোইনসোর নামের একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যৌথভাবে বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান জুলস পাওয়ার লিমিটেড (জেপিএল) প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছে। কেন্দ্রটিতে সারিবদ্ধভাবে বসানো হয়েছে ৮৭ হাজার সৌর প্যানেল।
টেকনাফে বিদ্যুতের মোট গ্রাহকসংখ্যা ৪০ হাজার। তাঁদের প্রয়োজন মেটাতে দরকার ১৭ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। কেন্দ্রটি উৎপাদন করছে ২০ মেগাওয়াট। অর্থাৎ প্রয়োজনের চেয়ে বেশি। উৎপাদিত বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যোগ হলেও অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টেকনাফে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে। আগে টেকনাফে ছয়–সাত ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকত। এখন প্রায় চব্বিশ ঘণ্টাই সেখানে বিদ্যুৎ পাচ্ছে মানুষ। আলো যাচ্ছে ঘরে ঘরে। এখন সেখানে লোডশেডিং নেই।
বিদ্যুতের কারণে অন্ধকার থেকে মুক্তি মিলেছে। আশা করা যায়, ইয়াবার ট্রানজিট এলাকা হিসেবে কুখ্যাত এই উপজেলার মাদকের অন্ধকারও এবার ঘুচবে। কারণ, বিদ্যুৎ থাকলে উৎপাদনমুখী কাজ বাড়বে। লোকজন বৈধ উৎপাদনমুখী কাজের দিকে ঝুঁকবে। প্রশাসনের ভাষ্য, আগে মাদকের বড় চোরাচালানগুলো হতো লোডশেডিংয়ের সময়। বিদ্যুৎ নিরবচ্ছিন্ন হওয়ায় এটা নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হবে।
সরকার ২০২১ সালের মধ্যে দেশে উৎপাদিত মোট বিদ্যুতের ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য উৎস থেকে উৎপাদন করবে বলে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এই প্রকল্পের সাফল্য দেখে মনে হচ্ছে সে লক্ষ্য পূরণ করা সম্ভব হবে। পরিবেশ সচেতনতার দিক থেকে আরও একটি বিরাট সুখবর হলো, ২০ বছর মেয়াদের টেকনাফের সোলার পার্ক চার লাখ মেট্রিক টন কার্বন নির্গমন নিয়ন্ত্রণ করবে। বিপুল পরিমাণ ডিজেল সাশ্রয়ের বিষয়টি তো রয়েছেই। এর ফলে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় হবে।
সরকারকে মাথায় রাখতে হবে ডিজেল বা কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের জন্য পরিবেশগত যে সমস্যা রয়েছে, সৌরবিদ্যুৎ প্যানেল স্থাপনে সেসব সমস্যা নেই। এখন বাংলাদেশে সৌরবিদ্যুতের ব্যাপক সম্প্রসারণের পথে যেসব বাধা রয়েছে, তা চিহ্নিত করা দরকার। সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে সৌরবিদ্যুৎকে আরও সুলভ করা সম্ভব। সেই দিকটির ওপরও নজর রেখে সরকারকে সামনে এগোতে হবে।