সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, এবার সড়কের অবস্থা অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে ভালো। মন্ত্রীর কথার সঙ্গে বাস্তবের মিল থাকলে যাত্রীসাধারণের ভোগান্তি কম হওয়ার কথা। কিন্তু ঈদের কয়েক দিন আগে যেভাবে সড়ক, রেল ও নৌপথে যাত্রীদের চাপ বাড়ছে, তাতে ধারণা করা যায় যে অতীতের মতো এবারও মানুষের যাত্রা নির্বিঘ্ন হবে না।
প্রতিবছর ঈদের আগে নতুন রং করে পুরোনো বাস সড়কে ও লঞ্চ নদীতে নামাতে দেখা যায়। এসব বাহনের ফিটনেস আছে কি না, চালকদের লাইসেন্স নবায়ন করা হয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হয় না। বাড়তি যাত্রীর চাপ সামাল দিতেই ফিটনেসবিহীন যানবাহন নামানো হয়। ঈদের সময় যাত্রীর সংখ্যা কয়েক গুণ বেড়ে যায়। এই অতিরিক্ত যাত্রী সামাল দেওয়ার জন্য যে কর্মপরিকল্পনা থাকা দরকার, তা সরকারকে নিতে দেখা যায় না। সমস্যা ঘাড়ের ওপর চেপে বসলে কিংবা কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে তৎপর হয়ে ওঠে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান। অতীত অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায় যে সড়কের মান ভালো থাকলেও ব্যবস্থাপনাগত ত্রুটি ও দুর্বলতা যাত্রীসাধারণের ভোগান্তি বাড়ায়।
করোনার সংক্রমণ কমে যাওয়ায় এবার ঘরমুখী মানুষের সংখ্যা অনেক বেশি। সেই সুযোগে একশ্রেণির পরিবহনমালিক ভাড়াও বাড়িয়ে দিচ্ছেন। যদিও উন্নত দেশগুলোতে এ রকম উৎসব আয়োজনে ভাড়া কমানো হয়। কয়েক মাস ধরেই অনেক সড়কে মেরামতকাজ চলছিল। ঈদের আগে সেগুলো শেষ করতে পারলে মানুষের ভোগান্তি কমত। কিছু কাজ বাকি থাকা সত্ত্বেও ঈদের আগে ঢাকা-টাঙ্গাইল রুটের দুটি উড়ালসড়ক খুলে দেওয়া হয়েছে।
ঈদের আগে রেলওয়েতে ৩০টি মিটারগেজ ও ১৬টি ব্রডগেজ লোকোমোটিভ যুক্ত করা ইতিবাচক। অন্যদিকে মানুষকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কমলাপুর স্টেশনে এসে অপেক্ষা করতে হয়েছে ঈদের টিকিটের জন্য। যাঁরা টিকিট পেয়েছেন, তাঁরা নিজেদের ভাগ্যবান মনে করেছেন। কিন্তু যাঁরা টিকিট পাননি, তাঁরা কী করবেন? একটি বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি বের করা হোক, যাতে যাত্রীরা ঘরে বসে ট্রেন, বাস ও লঞ্চের টিকিট পেতে পারেন।
আমাদের সড়ক পরিবহনব্যবস্থায় এখনো চরম বিশৃঙ্খলা ও নৈরাজ্য চলছে। চালকেরা বেশি মুনাফার জন্য বেপরোয়া গতিতে বাস চালিয়ে থাকেন, যা দুর্ঘটনার কারণ হয়ে থাকে। একই সড়কে বিভিন্ন গতির যানবাহন চলাচল করায় বেশি দুর্ঘটনা ঘটে। এবার ঈদযাত্রার প্রথম দুদিন যাত্রীরা হোঁচট খেয়েছেন সময়মতো ট্রেন না ছাড়ার কারণে। তদুপরি ট্রেনের ছাদে চড়েও মানুষ গন্তব্যে যাচ্ছে। যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। যেভাবে লঞ্চগুলো অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে ঢাকা থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে যাচ্ছে, তা–ও ঝুঁকি বাড়িয়ে দিয়েছে। ঈদযাত্রায় সবচেয়ে দুশ্চিন্তা ফেরি পারাপার নিয়ে। ফেরির বিলম্বের কারণে শত শত যানবাহন আটকা পড়ে পদ্মার দুই পারে। প্রতি ঈদে একই অভিজ্ঞতা সত্ত্বেও কর্তৃপক্ষকে টেকসই কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায় না।
রাতারাতি ভাঙাচোরা সড়কগুলো হয়তো মেরামত করা যাবে না। নতুন বাস, লঞ্চ, ফেরিও নামানো যাবে না। কিন্তু সড়ক, রেল ও নৌপথে টহল এবং নজরদারি বাড়িয়ে ঈদযাত্রা সহনীয় করা যায়। সংশ্লিষ্ট সবাই আইন মেনে যানবাহন চালালে ঈদযাত্রা ও ফিরে আসা পুরোপুরি নির্বিঘ্ন না হলেও যাত্রীদের ভোগান্তি অনেকাংশে কমানো সম্ভব বলে আমরা মনে করি।