নারী ও শিশু নির্যাতনের বিভিন্ন খবরে জনমানসে ক্ষোভ এবং ভয়ের পরিবেশের ছাপ স্পষ্ট। এই অপরাধ প্রতিরোধে নানা ধরনের সামাজিক আন্দোলন আছে। সরকারি উদ্যোগ আছে। আইন আছে। তারপরও নির্যাতনের ঘটনা কমেছে বা নারীরা আগের চেয়ে নিজেদের নিরাপদ বোধ করছেন—এমনটা মনে হয় না।
অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনার কথা প্রশাসনের কানে আসে ঘটনা ঘটে যাওয়ার অনেক পরে। নানা ধরনের আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে নির্যাতনের শিকার হওয়া নারী কিংবা শিশু প্রতিকার চেয়ে অভিযোগও জানাতে পারে না। তবে সরকারের একটি মহতী উদ্যোগ নতুন আশা জাগিয়েছে। দ্রুত প্রতিকারের পথ অনেকখানি উন্মুক্ত করেছে। জয় মোবাইল অ্যাপ নামের একটি প্রযুক্তিসেবা সবার মধ্যে এই আশা জাগিয়েছে। এই অ্যাপ হলো মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নারী নির্যাতন প্রতিরোধকল্পে মাল্টিসেক্টরাল প্রোগ্রামের উদ্ভাবিত একটি অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যার।
রাস্তাঘাটে বা যেকোনো জায়গায় যদি এমন হয়, কেউ নির্যাতনের শিকার হলেন, ফোন করে কারও সাহায্য চাওয়ার অবস্থাও নেই, সে ক্ষেত্রে যদি এই অ্যাপটি নামানো থাকে, তাহলে গোপনে মুঠোফোনের পাওয়ার বাটনে পরপর চারবার চাপ দিতে হবে। এরপর মুঠোফোন ভাইব্রেট হবে। তারপর পাওয়ার বাটনে আর একবার চাপ (মোট পাঁচবার) দিতে পারলেই তিনি বিপদে পড়েছেন—সে সংকেত চলে যাবে ‘জয় মোবাইল অ্যাপে’। অ্যাপের মাধ্যমে ঘটনার স্থান, কথা, এমনকি আশপাশের ছবিও চলে যাবে অ্যাপে।
আর যদি নির্যাতনের শিকার বা শিকার হওয়ার আশঙ্কা আছে, এমন কেউ মুঠোফোন বের করার মতো অবস্থায় থাকেন, তাহলে অ্যাপের জরুরি বাটন চেপে জিপিএস লোকেশন, ছবি ও অডিও রেকর্ডিং পাঠাতে পারবেন। গত ২৯ জুলাই অ্যাপটি চালু হয়েছে। জয় মোবাইল অ্যাপস সেন্টারে কর্মরত ব্যক্তিরা ২৪ ঘণ্টা সেবা দিচ্ছেন এবং অ্যাপটি নজরদারি করছেন। গত দুই মাসে ৩ হাজার ২৪১ জন অ্যাপটি মুঠোফোনে ইনস্টল করেছেন। এ পর্যন্ত অভিযোগ এসেছে ৯৪৭টি। অ্যাপের মাধ্যমে নারী ও শিশুর প্রতি নির্যাতনের জরুরি মুহূর্তে তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশ সুপার, মেট্রো এলাকার পুলিশের উপকমিশনার, নির্দিষ্ট তিনটি এফএনএফ নম্বর (ভিকটিম তিনটি মুঠোফোন নম্বর সিলেক্ট করে রাখবেন) এবং নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে ন্যাশনাল হেল্পলাইন সেন্টারে (১০৯) খুদে বার্তা চলে যাবে।
এই অ্যাপ ব্যবহারের সুবিধা ও নিয়ম জানেন—এমন মানুষের সংখ্যা খুবই কম। এখন যদি সরকারি উদ্যোগে অ্যাপটি সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়, তাহলে এটি বিরাট রক্ষাকবচ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে পারবে। এ বিষয়ে ব্যাপক প্রচার দরকার। তাহলেই এটি অপরাধী বা নির্যাতনকারীদের কাছে ‘আতঙ্ক’ হিসেবেই চিহ্নিত হবে। এ অ্যাপ সবাই ব্যবহার করা শুরু করলে অপরাধের মাত্রাও কমবে। সরকারের এই অভিযাত্রা আরও বহুদূর এগিয়ে যাক।