আইনের কঠোরতার প্রভাব নেতিবাচক

জয়পুরহাটে কিডনি বিক্রি

জানা যায়, রাজধানীর একটি হাসপাতালেই প্রায় ১০০ এবং অবশিষ্ট হাসপাতালগুলোতে বাকি ১০০ কিডনি প্রতিস্থাপন ঘটে। এই অবস্থা নির্দেশ করে যে দেশের কিডনি প্রতিস্থাপন চিকিৎসাব্যবস্থা অপ্রতুল। এই পরিস্থিতিতে জয়পুরহাটের কালাইয়ে কিডনি বিক্রির প্রবণতার খবর সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। গত বুধবার রাতে পুলিশ সেখানে এক দম্পতিকে গ্রেপ্তার করেছে। লক্ষণীয় যে কালাই উপজেলার অভাবগ্রস্ত ২০-২৫টি গ্রামে কিডনি বিক্রির প্রবণতা বেশি। গত চার বছরে সাতটি মামলায় ৬০ জনের বেশি আসামি হয়েছেন।

কিডনি রোগ মোকাবিলায় রাষ্ট্রের করণীয় নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে মতভিন্নতা আছে। তবে এটা পরিষ্কার যে আইনি বাধানিষেধের কারণে বিপুলসংখ্যক মানুষ কিডনির চিকিৎসা নিতে বৈদেশিক মুদ্রা খরচ করে বিদেশে যান। বাংলাদেশে যত কিডনি প্রতিস্থাপন করা সম্ভব ছিল, তা বহুলাংশে কুসংস্কার ও আইনি বাধাসহ নানা কারণে সম্ভব হচ্ছে না। নিকটাত্মীয়রা সহজে কিডনি দান করছেন না। তাঁরা ঝুঁকির বিষয়ে নিঃসন্দেহ নন। সে কারণে আইনের উদ্দেশ্য পূরণের অন্তর্নিহিত দুর্বলতা থাকছেই। জয়পুরহাটের প্রশাসন খোঁজ নিলে হয়তো জানবে যে দানকারীরা হরহামেশা প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। পাঁচ লাখ টাকা পাওয়ার আশায় কিডনি দিয়ে হাতে সামান্য টাকাই পেয়েছেন এমন ঘটনাও ঘটেছে। এখন প্রতিকার দূরে থাক, শাস্তির ভয়ে কিডনি বিক্রি করার তথ্যই তাঁকে গোপন রাখতে হচ্ছে।

অস্বীকার করা যাবে না যে নিজের ক্ষতি না করে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ দান করার অধিকার নাগরিকদের আছে। সিঙ্গাপুরের আইনে ‘ইমোশনাল ডোনারের’ স্বীকৃতি আছে। বন্ধু বন্ধুর জন্য সুচিন্তিতভাবে অঙ্গদান করতে চাইতে পারেন। কিংবা কোনো দয়ালু ব্যক্তি ভাবতেই পারেন যে তিনি একজন সমাজসেবী ব্যক্তিকে কিডনি দান করতে চান। কারণ, তাঁর নিজের ঝুঁকিমুক্ত জীবনের চেয়ে ওই ব্যক্তিকে বাঁচিয়ে রাখার মধ্যে তিনি তাঁর জীবনের সার্থকতা খুঁজে পেতে পারেন। আমাদের বর্তমান আইনটি সেই অর্থে কঠোর। এটিকে তাই শিথিল বা যুগোপযোগী করা সময়ের দাবি।

ভারতে কিডনি প্রতিস্থাপনের ব্যয় ২০ লাখ টাকার বেশি। বাংলাদেশের গণস্বাস্থ্য এই সেবা দুই লাখ টাকায় দেওয়ার উদ্যোগ নিচ্ছে। রাষ্ট্রের উচিত হবে এ ধরনের উদ্যোগগুলোকে পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়া।