মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা

জেলেরা কবে খাদ্যসহায়তা পাবেন

সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

করোনার ধাক্কার পর সাধারণ মানুষের গলার ফাঁস হয়ে দাঁড়িয়েছে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি। টিসিবির ট্রাকের পেছনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়েও কম দামে পণ্য পাচ্ছেন না অনেক মানুষ। গোটা দেশে টিসিবির ট্রাকও পর্যাপ্ত নয়। শহরের মানুষই টিসিবির ট্রাকের হদিস পেতে হিমশিম খাচ্ছেন, সেখানে গ্রামগঞ্জ ও প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ তো বঞ্চিতই হবেন। এর মধ্যে উপকূলের পরিস্থিতি আরও করুণ। সেখানে মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞায় পড়ে জেলেরা মাছ ধরতে নদ-নদীতেই নামতে পারছেন না। আয়ের প্রধানতম মাধ্যম বন্ধ থাকায় নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির কারণে হিমশিম খেতে হচ্ছে জেলে পরিবারগুলোকে। সরকারের খাদ্যসহায়তা নানা অনিয়মের কারণে জেলেদের কাছে পৌঁছাচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতে জেলেরা বাধ্য হয়ে মাছ ধরতে নদী নামছেন আর নিষেধাজ্ঞা অমান্য করায় প্রশাসন তঁাদের আটক করে জেল-জরিমানা দিচ্ছে। বিষয়টি অসহায় ও দরিদ্র জেলে পরিবারগুলোর জন্য মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ইলিশের উৎপাদন বাড়াতে উপকূলীয় এলাকার নদ-নদীতে ছোট ফাঁসের জাল দিয়ে মাছ ধরার ওপর গত ১ নভেম্বর থেকে টানা আট মাসের নিষেধাজ্ঞা চলছে। আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত জাটকা শিকার, পরিবহন, বিক্রির ওপর সরকারের এ নিষেধাজ্ঞা চালু থাকবে। নিষেধাজ্ঞার সময় উপকূলের নদ-নদীতে কেবল জাটকাই নয়, অন্য কোনো মাছও ধরতে পারছেন না জেলেরা। নিষেধাজ্ঞাকালীন জাটকা ধরা, সংরক্ষণ, পরিবহন, বিপণন দণ্ডনীয় অপরাধ। নিষেধাজ্ঞা চলাকালে জেলেদের পুনর্বাসনে উপকূলীয় জাটকা সম্পৃক্ত জেলাগুলোতে খাদ্যসহায়তা বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। কিন্তু ধীরগতি কার্যক্রম ও গড়িমসির কারণে এখনো অনেক জেলে সেই সহায়তা পাননি। আদৌ পাবেন কি, সেটি নিশ্চিত নয়। প্রতিবছরই জেলেরা এমন দুর্ভোগের শিকার হন।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, বরগুনায় ৩৭ হাজার ৯০৩টি জেলে পরিবারকে চার মাস খাদ্যসহায়তা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে
সরকার। ফেব্রুয়ারি থেকে মে—এ চার মাসে দুই ধাপে এ সহায়তা দেওয়ার কথা। এ কর্মসূচির আওতায় প্রতিটি জেলে পরিবার মাসে ৪০ কেজি করে ১৬০ কেজি চাল সহায়তা পাবে। দুই ধাপে (দুই মাস করে) এ সহায়তা বিতরণ করার কথা। প্রথম ধাপে এ সহায়তার জন্য ২ হাজার ২৪০ টন চাল বরাদ্দ করা হলেও অনেক জেলে সেই সহায়তা পাননি। জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ কুমার দেব বলেন, অল্প সময়ের মধ্যে জেলার জেলেদের মধ্যে এ সহায়তার চাল বিতরণ করা হবে। এ ছাড়া নিষেধাজ্ঞার সময় জেলেদের বিকল্প কর্মসংস্থান তৈরির লক্ষ্যে তাঁদের মধ্যে গরু-ছাগল দেওয়া হবে। প্রতিবছর এমন আশ্বাস আমরা শুনে থাকি। কিন্তু জেলেদের এ দুরবস্থা ঘুচবে কখন?