। ভোটার তালিকা হালনাগাদের সময় তথ্য সংগ্রহকারীদের দেওয়া ভুল তথ্যের কারণে সরকারি খাতায় তিনি এখন ‘মৃত’। নিজের বয়স্ক ভাতা ফিরে পাওয়ার আশায় ১০৭ বছর বয়সে এসে প্রায় এক বছর ধরে এই বৃদ্ধ নিজেকে জীবিত প্রমাণ করতে সরকারি অফিসের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। যাঁরা তাঁকে ‘জীবিত’ বলে প্রত্যয়ন করবেন, তাঁরাও জানেন, তাঁদেরই ভুলের কারণে বেঁচে থেকেও তিনি ‘মৃত’। কিন্তু আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে তাঁকে ‘বাঁচানো’ সময়সাপেক্ষ হয়ে গেছে। ভুল করেছেন সমীক্ষা কর্মীরা, আর এখন সেই ভুলের যিনি শিকার হয়েছেন, তাঁকেই বলা হচ্ছে, ‘যথাযথ প্রক্রিয়ায়’ ভুল শোধরানোর আবেদন করলে তাঁরা ব্যবস্থা নেবেন।
লোকমান হোসেনের জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর-৭৬১৮৩৭৬৩৩৫৫২৬। তাঁর দুই ছেলের মধ্যে এক ছেলে মারা গেছেন। মৃত ছেলের স্ত্রীর সংসারে তিনি থাকেন। প্রতি মাসে ৫০০ টাকা ভাতা পাচ্ছিলেন তিনি। হঠাৎ করে ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তাঁর ভাতা বন্ধ হয়ে যায়। উপজেলা নির্বাচন কার্যালয়সহ সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে যোগাযোগ করেও তাঁর ভাতার কার্ডটি আর চালু হয়নি। প্রায় এক বছর পর এসে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা বলছেন, ‘ভুক্তভোগী আবেদন করলে দ্রুত এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেব।’
ভুল যদি নিমেষেই হতে পারে, সংশোধন এত সময়সাপেক্ষ কেন? আর এই ধরনের ভুলের জন্য তথ্য সংগ্রহকারীর বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তা–ও বিরাট প্রশ্ন। শুধু লোকমান নন, তথ্য হালনাগাদকারীদের এই ধরনের ভুলে দেশে বহু মানুষ এভাবে বঞ্চনার শিকার হচ্ছেন। সুতরাং এই ভুলকে আর ভুল বলার সুযোগ থাকছে না। এটি সরাসরি অপরাধ।
সরকারের দিক থেকে যখন ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ স্লোগান সামনে আনা হচ্ছে, তখন এসব ঘটনা সরকারের সাফল্যকে ম্লান করে দিচ্ছে। যাঁদের ‘ভুল’ জলজ্যান্ত ‘থাকা’কে ‘না থাকা’ করে দিচ্ছে এবং সহায়–সম্বলহীন মানুষকে জীবন ও মৃত্যুর মাঝখানে ফেলে দিচ্ছে, তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিয়ে এবং ভুক্তভোগীদের ক্ষতিপূরণসহ প্রাপ্য ভাতা ফিরিয়ে দিয়ে সেই ‘ভুল’ সংশোধন করা জরুরি।