জলাভূমি ভরাট হয়ে যাচ্ছে

২০১০ সালে যখন ঢাকার বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (ড্যাপ) করা হয়েছিল, তখন অনেকে আশান্বিত হয়েছিলেন যে ঢাকার চারপাশের জলাভূমিগুলো সুরক্ষিত থাকবে।

শুধু পরিবেশ নয়, দেড় কোটি জন-অধ্যুষিত ঢাকা মহানগরীকে বাঁচানোর জন্যও চারপাশের জলাভূমি ও জলাশয় থাকা জরুরি ছিল। কিন্তু গত ৯ বছরে ভূমিদস্যুদের দৌরাত্ম্য যে তিল পরিমাণে কমেনি, তার প্রমাণ পাওয়া গেল ‘ঢাকা এবং এর চারপাশের জলাশয় ভরাটের চিত্র’ ও ‘সাভার অঞ্চলের জলাভূমি ভরাট’ শীর্ষক দুটি গবেষণায়।

গত বৃহস্পতিবার প্রকাশিত এ প্রতিবেদনমতে, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) আওতাধীন ও ঢাকা মহানগর উন্নয়ন প্রকল্প (ডিএমডিপি) এলাকা থেকে প্রতিবছর আড়াই হাজার একর জলাধার হারিয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে জলাশয় ১৬৫ একর, পানি ধারণ এলাকা ২১৫ একর এবং বন্যাপ্রবাহ এলাকা ২ হাজার ১২০ একর।

গত এক দশকে ড্যাপ আওতাভুক্ত ২২ শতাংশ জলাশয় ভরাট করা হয়েছে। মোট জলাভূমি ছিল ১ লাখ ৩৩৭ একর। ভরাট হয়েছে ২২ হাজার ৫১৬ একর। এটি আনুমানিক অভিযোগ নয়। গবেষণা প্রতিবেদনে স্যাটেলাইট ইমেজের মাধ্যমে ধারণ করা বিভিন্ন সময়ের জলাধার ভরাটের চিত্রও তুলে ধরা হয়েছে। ড্যাপের ২০১০ সালের ভূমি ব্যবহার ম্যাপ ও ২০১৯ সালের স্যাটেলাইট ইমেজ থেকে এ চিত্র পাওয়া গেছে।

এতে আরও বলা হয়, ২০১০ সালের ড্যাপের পরও সাভার থানার ১৬ শতাংশ বন্যাপ্রবাহ অঞ্চল, ৭৩ শতাংশ পানি ধারণ অঞ্চল, ৭ শতাংশ জলাশয় ভরাট করা হয়েছে। গাজীপুরে ২ হাজার ৩৬০ একর, রূপগঞ্জে ৬ হাজার ৭৮৬ একর, কেরানীগঞ্জে ৫ হাজার ৬৮৯ একর, ঢাকা মহানগরী এলাকায় ৩ হাজার ৪৮৩ একর জলাভূমি ভরাট করা হয়েছে। রাজউকের অপর এক সমীক্ষায় তুরাগতীরের ২ হাজার ৪০৩ দশমিক ৩৪ একর জলাভূমি ভরাট করার কথা বলা হয়েছে।

ড্যাপ কার্যকরের ১০ বছর আগে ২০০০ সালে প্রণীত প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষণ আইনেও জলাভূমি ভরাট করা নিষিদ্ধ। এই আইন অনুযায়ী, মহাপরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত বা চিহ্নিত নদী, খাল, বিল, দিঘি, ঝরনা বা জলাশয়, বন্যাপ্রবাহ এলাকা এবং বৃষ্টির পানি ধারণ করে এমন কোনো ভূমির শ্রেণি পরিবর্তন করা যাবে না। অথচ ভূমিদস্যুরা রাজউকের একশ্রেণির কর্মকর্তা ও স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তায় নিয়ত জলাভূমি দখল ভরাট করছে। এটি দেখার কথা রাজউকের। কিন্তু সরষের ভেতরেই যদি ভূত থাকে, তাহলে ভূত তাড়াবে কীভাবে?

দুটি গবেষণা প্রতিবেদনে জলাভূমি দখলের ভয়াবহ চিত্র উঠে আসার পাশাপাশি কৌতূহলোদ্দীপক খবর হলো মেট্রো মেকার্স লিমিটেড নামের কোম্পানির মধুমতী আবাসন প্রকল্পটি সর্বোচ্চ আদালত অবৈধ ঘোষণা করেছেন। এই প্রকল্পের বিরুদ্ধে পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) জনস্বার্থে মামলা করেছিল ২০০৪ সালে। রায় পেতে লাগল ১৫ বছর। এর মাধ্যমে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বলা যায়।

কিন্তু সব জলাভূমি উদ্ধারের জন্য এ রকম দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের সামর্থ্য ও ধৈর্য না-ও থাকতে পারে। সে ক্ষেত্রে কি ভূমিদস্যুরাই জয়ী হবে? রাজউকের কিছুই করণীয় নেই?