সখীপুর উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের রুগ্‌ণ দশা

জনবলসংকট দ্রুত মেটান

সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

করোনা পরিস্থিতির কারণে আমাদের স্বাস্থ্যব্যবস্থার রুগ্‌ণ অবস্থা বেরিয়ে পড়ে। রাজধানী ও বিভাগীয় শহরের বাইরে বেহাল স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে সংসদ অধিবেশনেও কম সমালোচনা হয়নি। তারই পরিপ্রেক্ষিতে চিকিৎসক, নার্সসহ বিপুলসংখ্যক জনবল নিয়োগের কথা জানিয়েছিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। কিন্তু সেই জনবল কি ঠিকঠাক চাহিদা পূরণের সক্ষমতা রাখতে পেরেছে বা পারছে? অনেক জায়গা নিশ্চয়ই নয়। যার কারণে টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলা সদরের একটি উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র চলছে কোনো চিকিৎসক ছাড়াই। শুধু তাই নয়, একজন ফার্মাসিস্ট একাই পাঁচজনের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন সেখানে।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, সখীপুর সদর উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে পাঁচটি পদের চারটিই শূন্য। পদগুলো হচ্ছে চিকিৎসা কর্মকর্তা, উপসহকারী কমিউনিটি চিকিৎসা কর্মকর্তা, মিডওয়াইফ, ফার্মাসিস্ট ও অফিস সহায়ক। পাঁচটি পদ থাকলেও আড়াই বছর ধরে একাই পাঁচজনের দায়িত্ব পালন করছেন ফার্মাসিস্ট সাইফুল আলম। প্রতিদিন স্বাস্থ্যকেন্দ্রের দরজার তালা খোলা, ঘর ঝাড়ু দেওয়া থেকে শুরু করে রোগী দেখা পর্যন্ত সবই করেন তিনি। এভাবেই চিকিৎসক না হয়েও তাঁকে রোগী সামলাতে হয়, ওষুধও দিতে হয়। কিন্তু আইনত বাধা থাকায় রোগীদের ব্যবস্থাপত্র দিতে পারেন না। কিন্তু সেটি ছাড়া আবার রোগীদের ওষুধ কেনা, ঠিকঠাক ওষুধ খেতে গিয়ে নানা সমস্যায় পড়তে হয়।

আইন অনুসারে চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী ফার্মাসিস্ট রোগীকে ওষুধ সরবরাহ করবেন। রোগীকে ওষুধ খাওয়ার নিয়ম বলে দেবেন। স্বাস্থ্যকেন্দ্রের বরাদ্দ করা ওষুধ তাঁর হেফাজতে সংরক্ষিত থাকবে। রোগী দেখা বা রোগীর ব্যবস্থাপত্র লেখা তাঁর এখতিয়ারবহির্ভূত। হাসপাতাল ঝাড়ু দেওয়াও তাঁর কাজ নয়। তিনি একা থাকায় কোনো ছুটিও নিতে পারছেন না। প্রতিদিন তাঁকে ৪০ থেকে ৫০ জন রোগীকে সামাল দিতে হচ্ছে। এলাকাবাসীর বক্তব্য হচ্ছে চিকিৎসক না থাকায় বিস্তারিত রোগের বর্ণনা দিয়ে প্রেসক্রিপশন করে ওষুধ নেওয়া সম্ভব হয় না। নারীরা পড়েন বেশি অসুবিধায়, প্রসূতিসহ নানা ধরনের সেবা থেকে তাঁরা বঞ্চিত হচ্ছেন। প্রথম আলোর প্রতিবেদক ফোনে জানালেন, সংবাদ প্রকাশের পর সাময়িকভাবে কাজ চালানোর জন্য একজন মিডওয়াইফ পাঠানো হয়েছে। কিন্তু এর স্থায়ী সমাধান হওয়া উচিত।

দৈনন্দিন বা সাধারণ রোগের কারণে মানুষের ভরসা হচ্ছে উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র বা কমিউনিটি ক্লিনিক। শিশু ও নারীস্বাস্থ্য ও প্রসূতিসেবাতেও তৃণমূল পর্যায়ের এসব স্বাস্থ্যকেন্দ্রের বড় ভূমিকা আছে। ফলে সেখানে জনবল সংকট থাকাটা কোনোভাবেই কাম্য নয়। আড়াই বছর ধরে একটি উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে কেন চিকিৎসক থাকবে না, সেটিই অবাক করার বিষয়। আশা করি জেলা সিভিল সার্জন সেখানকার সবগুলো পদে স্থায়ীভাবে জনবল নিয়োগে দ্রুত ব্যবস্থা নেবেন।