১৭ জানুয়ারি কুষ্টিয়ায় নির্মাণাধীন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ছাদ ধসে এক শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনাটি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ, এটা নিছক কোনো দুর্ঘটনা নয়। সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অনিয়মকেই এই মৃত্যুর জন্য দায়ী করা যায়। হাসপাতাল ভবনের ছাদ ঢালাইয়ের কাজে সাটারিং (ঠেকনা) হিসেবে স্টিলের পাতের পরিবর্তে বাঁশ ও কাঠ ব্যবহার করায় ছাদ ধসে পড়ে।
প্রথম আলোয় প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, জহুরুল লিমিটেড নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এই মেডিকেল কলেজ ভবন নির্মাণের দায়িত্বে রয়েছে। হাসপাতাল ভবনের ছাদ ঢালাইয়ের কাজে শুরু থেকেই সাটারিং হিসেবে বাঁশ ও কাঠ ব্যবহার করা হচ্ছে। অথচ ছাদের উচ্চতা ও দরপত্র অনুসারে স্টিলের পাত ব্যবহার করা বাঞ্ছনীয় ছিল।
বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে কয়েক দফা জানানোও হয়েছিল। কিন্তু তারপরও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বা তাদের এ ব্যাপারে সতর্কও করা হয়নি। তখন যদি ব্যবস্থা নেওয়া হতো, তাহলে হয়তো এখন ছাদ ধসে শ্রমিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটত না। গণপূর্তের একটি সূত্র অনুযায়ী, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জহুরুল লিমিটেড সড়ক ও সেতু নির্মাণের জন্য স্বনামধন্য হলেও ভবন নির্মাণের জন্য তার জনবল ও অভিজ্ঞতার ঘাটতি আছে। তারপরও এই প্রতিষ্ঠানই কাজ পাচ্ছে। এই মুহূর্তে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ ছাড়া আরও চারটি বড় কাজ করছে প্রতিষ্ঠানটি। এমন একটি প্রতিষ্ঠানের বড় বড় কাজ পাওয়ার পেছনে প্রভাবশালী ও স্বার্থান্বেষী কোনো গোষ্ঠীর যোগসাজশ থাকাই স্বাভাবিক। এই প্রক্রিয়ায় দুর্নীতি ও ভাগ-বাঁটোয়ারার সম্পর্ক নতুন কিছু নয়।
আমাদের দেশে সরকারি ভবনসহ বিভিন্ন ধরনের নির্মাণকাজে নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহার করাসহ নানা ধরনের অনিয়মের বিষয়টি এখন ‘ওপেন সিক্রেট’। ২০১৬ সালের এপ্রিল মাসে চুয়াডাঙ্গা জেলার দর্শনায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের একটি ভবন নির্মাণে রডের পরিবর্তে বাঁশ ব্যবহারের খবর সারা দেশে তোলপাড় সৃষ্টি করে। এরপর গাইবান্ধা, পাবনাসহ দেশের আরও কয়েকটি স্থানে ভবন নির্মাণে রডের পরিবর্তে বাঁশ ব্যবহারের খবর পাওয়া যায়। কিন্তু দু-একজনকে বদলি করা ছাড়া এসব দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের কোনো শাস্তি দেওয়া হয়নি।
যাঁরা দুর্নীতি করেন, তাঁদের যখন বিচারের আওতায় আনা হয় না; বরং অনেক সময় সুরক্ষা দেওয়া হয়, তখন দুর্নীতির বিস্তার ঘটাই স্বাভাবিক। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো অতিরিক্ত লাভের জন্য সাধারণ মানুষকে মারাত্মক ঝুঁকির মুখে ফেলে দিচ্ছে। অথচ এ নিয়ে সংশ্লিষ্টদের যেন বিকার নেই। যে প্রতিষ্ঠানগুলো এ ধরনের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত, তাদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে পারলে অতিরিক্ত লাভ করার প্রবণতাকে রোধ করা সম্ভব। সবচেয়ে বড় কথা, যোগ্য ও মান নিশ্চিত করতে পারবে—এমন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান যাতে কাজ পায়, তা নিশ্চিত করতে হবে। এ ব্যাপারে আমরা দুর্নীতি দমন কমিশনসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষকে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানাই।