একজন কৃষকের কর্মস্থল মাঠ, একজন ব্যবসায়ীর কর্মস্থল ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান—এই রকম বিভিন্ন পেশার মানুষের কর্মস্থল নির্ধারিত আছে। চিকিৎসকের আনুষ্ঠানিক কর্মস্থল হাসপাতাল বা ক্লিনিক হলেও প্রকৃত চিকিৎসকের নির্দিষ্ট কর্মস্থল নেই। যেখানেই রোগী সেখানেই তাঁর কর্মস্থল। আর্তমানবতার শুশ্রূষায় একজন প্রকৃত চিকিৎসক সার্বক্ষণিক দায়িত্বে নিয়োজিত থাকেন। এ কারণে সমাজ–স্বীকৃত সব পেশা সমাজসেবায় ভূমিকা রাখলেও চিকিৎসকের আবেদন ও প্রয়োজনীয়তা চিরন্তন। তবে এই আধুনিক করপোরেট জমানায় সবাই যেখানে বাণিজ্যমনস্ক হয়ে উঠেছেন, সেখানে চিকিৎসকেরাও তাঁদের বাইরের কেউ বলে গণ্য হচ্ছেন না। এরপরও বহু চিকিৎসক আছেন, যাঁরা এই পেশাকে শুধু অর্থ উপার্জনের মাধ্যম হিসেবে নেননি, মানবতার সেবা করার সুযোগ হিসেবে নিয়েছেন।
এই ধরনের মানবসেবায় আত্মনিয়োগের অনন্য দৃষ্টান্ত দেখিয়েছেন চিকিৎসক ভাই–বোন। তাঁরা হলেন চিকিৎসক হাবিবুর রহমান ও তাঁর বোন নাসরিন রহমান।
প্রথম আলোর প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, কর্মব্যস্ত মানুষ সাপ্তাহিক ছুটির দিনে বিশ্রাম নিলেও এই দুই ভাই–বোন ব্যতিক্রম। ছুটির দিনটাতে তাঁরা ছুটে যান কেরানীগঞ্জের প্রত্যন্ত এলাকায়। সেখানে অসহায় ও দরিদ্র মানুষকে তাঁরা চিকিৎসাসেবা দেন। তাঁরা নিজেদের এই উদ্যোগের নাম দিয়েছেন জার্নি ফর হিউম্যানিটি বা মানবতার যাত্রা। একেক সপ্তাহে একেক এলাকায় ভাই-বোনের ‘আলাদিন ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প’–এর কার্যক্রম চলে। তাঁরা যে সপ্তাহে যে এলাকায় যান, তার আগেই মাইকিং করে লোকজনকে বিষয়টি জানিয়ে দেওয়া হয়। শুক্রবার সকাল আটটায় বিনা মূল্যে চিকিৎসাসেবা শুরু হয়। চলে বিকেল চারটা পর্যন্ত। এ সময় দুস্থ রোগীদের বিনা মূল্যে ওষুধও দেওয়া হয়। চলতি বছর এ পর্যন্ত তাঁরা ৩৮টি ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প পরিচালনা করে ৫ হাজার ৬৯৪ জন দুস্থ ও দরিদ্র রোগীকে চিকিৎসাসেবা দিয়েছেন। কেরানীগঞ্জের বিভিন্ন গ্রামের অসহায়, দরিদ্র ও দুস্থ মানুষকে বিনা মূল্যে চিকিৎসাসেবা ও সাধ্য অনুযায়ী বিনা মূল্যে ওষুধ দিচ্ছেন। তাঁরা তাঁদের ব্যক্তিগত উপার্জনের অর্থ থেকে এই ক্যাম্পের খরচ জোগাচ্ছেন।
বাংলাদেশের চিকিৎসাব্যবস্থার প্রেক্ষাপটে এই উদ্যোগ দৃষ্টান্তযোগ্য।
হাবিবুর রহমান ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করে একটি বেসরকারি ক্লিনিক পরিচালনার দায়িত্বে আছেন। তাঁর বোন নাসরিন রহমান সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের গাইনি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক। তাঁরা ভবিষ্যতে কেরানীগঞ্জে হাসপাতাল নির্মাণের পরিকল্পনা করছেন, যেখানে দরিদ্র ও দুস্থ মানুষকে বিনা মূল্যে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হবে। এই মহান পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে সমাজ উপকৃত হবে। আর্তপীড়িতরা একটি ভরসার জায়গা পাবে। সেই ভরসাস্থল প্রতিষ্ঠার দায়বদ্ধতা থেকে সমাজ ও সরকারের সর্বস্তর থেকে দুই চিকিৎসকের পাশে দাঁড়ানো দরকার।