করোনাভাইরাসের সংক্রমণ মোকাবিলায় সরকারি স্বাস্থ্যব্যবস্থায় অন্যান্য সংকটের পাশাপাশি চিকিৎসকের ঘাটতির কথা সুবিদিত। এই অবস্থায় নতুন পরীক্ষার মাধ্যমে নতুন নিয়োগ তো দূরের কথা, পিএসসি তথা সরকারি কর্ম কমিশনের সুপারিশ থাকা সত্ত্বেও বিসিএস ক্যাডার পদে ৭১ জন চিকিৎসকের নিয়োগ আটকে আছে কয়েক মাস ধরে।
৩৯তম বিসিএস থেকে নন-ক্যাডার পদে সুপারিশ পাওয়া দুই হাজার চিকিৎসককে সম্প্রতি সরকারি ক্যাডার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু একই বিসিএস পরীক্ষায় ক্যাডার পদে নিয়োগের জন্য পিএসসির সুপারিশ থাকা সত্ত্বেও এই ৭১ জনের নিয়োগ আটকে রয়েছে। পাশাপাশি ৩২তম থেকে ৩৭তম বিসিএসে স্বাস্থ্য ক্যাডারে সুপারিশকৃতদের মধ্যে ১৬০ জন বাদ পড়ে যান। এ বিষয়ে প্রথম আলোর সংবাদে ভুক্তভোগীরা তাঁদের সম্পর্কে পুলিশের নেতিবাচক প্রতিবেদনকে দায়ী করেছেন।
এই চিকিৎসকেরা প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দিয়ে করোনার দুঃসময়ে দেশের যেকোনো জায়গায় কাজ করায় তাঁদের সদিচ্ছার কথা জানিয়েছেন। মানবিক দিক থেকেও তাঁদের আরজিটা বিবেচনা করা যায়। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে দ্রুত নিয়োগ দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারির দাবি জানিয়েছেন নিয়োগবঞ্চিত চিকিৎসকেরা। ৩২ থেকে ৩৯তম বিসিএস পর্যন্ত যোগ্য, উত্তীর্ণ এবং পিএসসির সুপারিশ ধন্য এই চিকিৎসকদের চাকরি দরকার, জরুরি ভিত্তিতে দেশের দরকার আরও আরও চিকিৎসক। পুলিশের দ্বারা যাচাইয়ের কারণটি যদি সত্য হয়, সে ক্ষেত্রে তুচ্ছ ও অপ্রাসঙ্গিক কারণে এই চিকিৎসকেরা বঞ্চিত হলে দেশই বঞ্চিত হবে।
একেকটি বিসিএসে পিএসসি থেকে নিয়োগ পেতে তিন থেকে চার বছর লেগে যায়। এরপর প্রজ্ঞাপনে বাদ পড়া চরম হতাশাজনক। এঁদের অনেকেরই আর সরকারি চাকরির প্রার্থী হওয়ার বয়স নেই। মন্ত্রণালয়ের দ্বারে দ্বারে ঘুরে সেই বয়স তাঁরা খুইয়েছেন। এই বাদ পড়াদের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান যেমন রয়েছেন, তেমনি রয়েছেন মেধাতালিকায় ১০০ জনের মধ্যে থাকা প্রার্থীও।
স্বাস্থ্য ক্যাডার ও নন-ক্যাডার সার্ভিস সরাসরি ক্ষমতার সঙ্গে যুক্ত নয়। কারও বিরুদ্ধে প্রমাণিত রাষ্ট্রদ্রোহ বা গুরুতর ক্ষতিকর কার্যকলাপে জড়িত থাকার ঘটনা না থাকলে, রাজনৈতিক ছাঁকনি ব্যবহার করা বা সেই বিবেচনায় চাকরি না দেওয়া মোটেই রাষ্ট্রাচার নয়। তা ছাড়া যখন হাজারো মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত, দায়িত্বরত চিকিৎসকেরা যেখানে চূড়ান্ত ঝুঁকি নিয়েও লোকবলের অভাবে বিপর্যস্ত, তখন কোনো ছুতায় নতুন চিকিৎসক নিয়োগ আটকে রাখা সত্যিই দুঃখজনক।