দেশের বিভিন্ন স্থানে চাকরি দেওয়ার নাম করে প্রতারক চক্র যে চাকরিপ্রার্থীদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নিয়ে থাকে, তার ছোট্ট একটি নমুনা পাওয়া গেল গত শুক্রবার প্রথম আলোর তৃতীয় পাতায়। ‘চাকরির প্রলোভনে প্রতারণা, গ্রেপ্তার ১৩’ শিরোনামে প্রকাশিত খবরে বল হয়, চাকরির প্রলোভন দিয়ে টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগে প্রতারক চক্রের ১৩ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। তঁাদের কাছ থেকে কোম্পানির প্যাডে ১১৫টি অঙ্গীকারনামা, কোম্পানির নামে পূরণ করা ৪২টি আবেদনপত্র ও সম্মতিপত্র ফরম ও ৩০টি ট্রেডিং কার্ড জব্দ করা হয়েছে। ভুক্তভোগী ব্যক্তিদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সিআইডি গত বুধবার বারিধারার নতুন বাজার এলাকা থেকে প্রতারক চক্রের সদস্যদের গ্রেপ্তার করে।
চাকরির নামে প্রতারণার এটিই একমাত্র খবর নয়। প্রায়ই পত্রিকায়, ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় এ-সংক্রান্ত খবর প্রকাশিত ও প্রচারিত হচ্ছে। গত আগস্টেও একটি চক্র ধরা পড়েছিল। চাকরি দেওয়ার নামে প্রতারক চক্র নানা কৌশল অবলম্বন করে থাকে। কখনো ব্যক্তিগতভাবে তারা চাকরিপ্রার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে, কখনো পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে চাকরিপ্রার্থীদের আকৃষ্ট করার চেষ্টা চালায়। চাকরি দেওয়ার বিষয়টি বিশ্বাসযোগ্য করতে তারা কিছুদিনের জন্য অভিজাত এলাকায় জৌলুশপূর্ণ অফিস ভাড়া নেয়, বিশ্বস্ত লোকজন নিয়োগ করে বেকার যুবকদের ফাঁদে ফেলতে চেষ্টা করে। এরপর চাকরিপ্রার্থীদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিয়ে সেখান থেকে পাততাড়ি গুটিয়ে তারা অন্যখানে চলে যায়।
বাংলাদেশে কর্মসংস্থানের বড় অভাব। উচ্চশিক্ষা নিয়েও লাখ লাখ যুবক বেকার জীবনযাপন করছেন। আর তাঁদের সেই অসহায়ত্বের সুযোগ নিচ্ছে এই প্রতারক চক্র। এদের শিকড় অনেক গভীরে। তাই শিকড়সুদ্ধ উপড়ে ফেলতে হবে; শুধু ডালপালা কাটলে হবে না। এই প্রতারক চক্রের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অসাধু সদস্যদের যোগসাজশ থাকাও অস্বাভাবিক নয়। না হলে কীভাবে তারা ভুয়া কোম্পানির নামে মাসের পর মাস ভুয়া নিয়োগ ব্যবসা চালায়?
চাকরি দেওয়ার নামে প্রতারণার দায়ে বারিধারায় যঁারা গ্রেপ্তার হয়েছেন, তাঁরা যাতে আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে বেরিয়ে যেতে না পারেন, সে বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রতারক চক্রের উপযুক্ত শাস্তিই পারে এ ধরনের অপরাধ ও দুর্বৃত্তায়ন বন্ধ করতে।
আমরা মনে করি, বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অদক্ষ নয়। যারা দুর্ধর্ষ জঙ্গি ও মাদক পাচার চক্রের হোতাদের পাকড়াও করতে পারে, তারা কেন এই প্রতারক চক্রকে ধরতে পারবে না? নিঃস্ব ও অসহায় মানুষকে প্রতারণার হাত থেকে সুরক্ষা দিতে আইনের যথাযথ ব্যবহার চাই। চাই সামাজিক সচেতনতাও।