চাকরির পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস

সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

২১ জানুয়ারি মহাহিসাব নিরীক্ষকের কার্যালয়ের অধীন ‘অডিটর’ নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ১০ জনকে গ্রেপ্তার করে ডিবি পুলিশ। এ চক্রের একজন হলেন সাবেক ছাত্রলীগ নেত্রী ও বর্তমানে বগুড়ার দুপচাঁচিয়া উপজেলার মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মাহবুবা নাসরিন। তিনি পরীক্ষার্থী সেজে বিশেষ ডিভাইসের মাধ্যমে প্রশ্ন বাইরে পাঠিয়ে দিচ্ছিলেন এবং সেখান থেকে নির্দিষ্ট প্রার্থীদের কাছে প্রশ্নের উত্তর পাঠানো হয়েছিল একই পদ্ধতিতে।

প্রশ্নপত্র ফাঁস করে ‘অডিটর’ নিয়োগ পরীক্ষায় চাকরি দেওয়ার কথা বলে ১৮ প্রার্থীর সঙ্গে টাকার চুক্তি করেছিল চক্রটি। তাঁদের মধ্যে ১২ জন চাকরিপ্রার্থীর নাম পেয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগ। ওই ১২ জনের একজন হচ্ছেন মাহবুবা নাসরিনের ভাই মো. রানা। ডিবি বলছে, মাহবুবার সঙ্গে এ চক্রে মহাহিসাব নিরীক্ষকের কার্যালয়ের (সিজিএ) বরখাস্ত করা কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান ও রেলওয়ের সহকারী স্টেশনমাস্টার জহিরুল ইসলাম জড়িত। মাহমুদুল হাসান গ্রেপ্তার হলেও জহিরুল ইসলাম আত্মগোপনে রয়েছেন।

এর আগে গত নভেম্বরে রাষ্ট্রায়ত্ত পাঁচ ব্যাংকের নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতি ধরা পড়ার পর বাংলাদেশ ব্যাংক পরীক্ষা বাতিল করে দিয়েছে। ওই ঘটনার সঙ্গে আহছানউল্লাহ ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির একাধিক কর্মকর্তার জড়িত থাকার অভিযোগ ছিল। তবে নিয়োগ পরীক্ষায় এ দুটি জালিয়াতির ঘটনাই শেষ কথা নয়। জালিয়াত চক্রের ফাঁদ পাতা দেশজুড়ে। প্রথম আলোর খবর থেকে জানা যায়, মহাহিসাবরক্ষকের কার্যালয়ের অডিটর পদে নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের সঙ্গে জড়িত চক্রটি গত ১০ বছরে অন্তত ১৮টি নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস করেছে। এ চক্রের মাধ্যমে নিয়োগ পরীক্ষা দিয়ে ব্যাংক, রেলওয়ে ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ পাওয়ার তথ্য পেয়েছে পুলিশ।

ডিবি পুলিশের ভাষ্য অনুযায়ী, চক্রটি অনেক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস করেছে। তারা বিভিন্ন সময় ব্যাংক, অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ, সিটি করপোরেশন, জ্বালানি বিভাগ, বাংলাদেশ রেলওয়ে, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর, সমবায় অধিদপ্তর, কৃষি অধিদপ্তর, খাদ্য অধিদপ্তরের অডিটর, বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন হিসাবনিরীক্ষক কার্যালয়, জ্বালানি অধিদপ্তর, সাধারণ বীমা করপোরেশনসহ অন্তত ১৮টি নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস করেছে।

অতীতে দেখা গেছে, কোনো অপরাধী ধরা পড়লে কিংবা অপকর্ম ফাঁস হলেই কর্তৃপক্ষ খানিকটা নড়েচড়ে বসে। এরপর আবার সবকিছু আগের মতো চলতে থাকে। প্রশ্নপত্র ফাঁসের ক্ষেত্রে সে রকম কিছু হবে না বলেই আমরা বিশ্বাস করতে চাই। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জালিয়াত চক্রকে ধরেছে, এ জন্য তারা সাধুবাদ পেতে পারে। এসব চাকরির পরীক্ষায় যঁারা অসৎ উপায়ে চাকরি নিয়েছেন, তাঁদেরও চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে হবে। মনে রাখতে হবে, তাঁরাও অপরাধের অংশীদার। প্রশ্নপত্র ফাঁসের কারণে অনেক মেধাবী পরীক্ষার্থী চাকরি থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।

একসময় বিজি প্রেসের কর্মচারীদের মাধ্যমে প্রশ্নপত্র ফাঁস হতো। সেটা ছিল অ্যানালগ যুগ। এখন ডিজিটাল যুগে জালিয়াত চক্রটি তাদের অপকর্ম সম্পন্ন করতে নানা রকম ডিভাইস ব্যবহার করছে।

কয়েকজন ধরা পড়েছেন বলে এ কথা ভাবার কারণ নেই যে এর বাইরে কেউ নেই। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি কিংবা চাকরির পরীক্ষার ক্ষেত্রে এ জালিয়াতি বন্ধ করতেই হবে।