চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর হাসপাতালের নতুন ১৫০ শয্যার ভবনের কার্যক্রম শুরু না হওয়ায় সেখানে চিকিৎসাসেবা নিতে আসা মানুষের যে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে, তা একেবারেই অনভিপ্রেত। এর মধ্য দিয়ে দেশের স্বাস্থ্য খাতের বেহাল চিত্রটি আবার সামনে এল।
প্রথম আলোয় প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর হাসপাতালে প্রতিদিন বহির্বিভাগে ১ হাজার ৬০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ রোগী চিকিৎসা নিতে আসে। হাসপাতালে ২০০ জনের বেশি ভর্তি থাকে। অথচ এ ভবনে শয্যা আছে ১০০টি। অন্যদিকে জরুরি বিভাগেও প্রতিদিন প্রায় ২০০ রোগী সামলাতে হয়। এত রোগী সামলাতে গিয়ে প্রতিদিন চারজন চিকিৎসা কর্মকর্তা ও পাঁচজন উপসহকারী কমিউনিটি চিকিৎসা কর্মকর্তাকে হিমশিম খেতে হয়। ফলে অনেক ক্ষেত্রেই তাঁদের পক্ষে রোগীদের মানসম্পন্ন চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হয় না। রোগীদেরও দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকাসহ নানা ধরনের ভোগান্তি পোহাতে হয়। অথচ পাশেই দাঁড়িয়ে আছে ১৫০ শয্যার আধুনিক সুবিধাসংবলিত একটি ভবন। গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে হাসপাতালের এই নতুন ভবনের উদ্বোধন করা হয়। কিন্তু ছয় মাস পেরিয়ে গেলেও সেখানে প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ দেওয়া হয়নি। হাসপাতালে এখনো অক্সিজেন সরবরাহ লাইন স্থাপিত হয়নি। সংযুক্ত হয়নি লিফট।
প্রশ্ন হচ্ছে, এসব করতে কি ছয় মাস সময় লাগে? জেলা সিভিল সার্জন হাসপাতালের এই সব অসুবিধার কথা জানিয়ে নতুন ভবনে চিকিৎসকসহ প্রয়োজনীয় লোকবল দিতে স্বাস্থ্য বিভাগের মহাপরিচালকের কাছে আবেদন জানিয়েছেন। কিন্তু স্বাস্থ্য বিভাগ যে এ আবেদনে সাড়া দেয়নি, তা তো বোঝাই যাচ্ছে।
জাতিসংঘ প্রণীত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এসডিজি) ১৭টি লক্ষ্যের অন্যতম হলো সবার জন্য সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করা। কারণ, একটি সুস্থ জাতিই একটি টেকসই উন্নয়ন উপহার দিতে পারে। বাংলাদেশ জাতিসংঘের সদস্যভুক্ত দেশ হওয়ায় ২০৩০ সালের মধ্যে সর্বজনীন স্বাস্থ্যবিধি অর্জনের বাধ্যবাধকতা দেশটির ওপর রয়েছে। কাজেই সরকারকে জনস্বাস্থ্যের সুরক্ষার বিষয়ে আরও সচেতন হতে হবে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, একটি স্বাস্থ্যব্যবস্থা ঠিকভাবে কাজ করার জন্য ছয়টি বিষয় নিশ্চিত করা প্রয়োজন—প্রয়োজনীয় অর্থায়ন, জনবল, চিকিৎসা সরঞ্জাম, তথ্য-উপাত্ত, সেবাদানের সঠিক নির্দেশিকা ও যথাযথ ব্যবস্থাপনা। এর যেকোনো একটির অনুপস্থিতিতে অন্যটি ঠিকভাবে কাজ করতে পারে না। যেহেতু ‘স্বাস্থ্যসেবা’ বাংলাদেশের সব নাগরিকের সাংবিধানিক অধিকার, সেহেতু রাষ্ট্রকে এই ছয়টি নিয়ামকের সঠিক বরাদ্দ ও ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। এ জন্য স্বাস্থ্য খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। এ খাতের অনিয়ম, দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনা দূর করতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর হাসপাতালসহ সব হাসপাতালের সুষ্ঠু চিকিৎসা কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে জনবলের সংকটসহ অন্যান্য সমস্যার দ্রুত সমাধানে সরকার উদ্যোগী হবে, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।