চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা

জলাবদ্ধতার অভিশাপ থেকে কি মুক্তি নেই চট্টগ্রামবাসীর? এক মেয়র যান তো আরেক মেয়র আসেন। নগরবাসী বারবার প্রতিশ্রুতি পায়। কিন্তু জলাবদ্ধতার অভিশাপ থেকে মুক্তি আর মেলে না। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সঠিক পরিকল্পনা ও সমন্বিত উদ্যোগের অভাবেই আজকের এ জলাবদ্ধতা। সামান্য বৃষ্টিপাতেও এখন নগরীর অধিকাংশ এলাকা ডুবে যায়। অপরিকল্পিতভাবে নানা স্থাপনা গড়ে ওঠায় এ সমস্যা আরও প্রকট হয়েছে। পানিনিষ্কাশনের কোনো ব্যবস্থা না থাকা জলাবদ্ধতার প্রধান কারণ। চট্টগ্রাম নগর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) জলাবদ্ধতা নিরসনে সেই ১৯৯২ সালে তিনটি নতুন এবং ১৫টি শাখা খাল খননের সুপারিশ করেছিল। কিন্তু দীর্ঘ ২৭ বছরেও সেই সুপারিশ বাস্তবায়িত হয়নি।

বৃহস্পতিবার প্রথম আলোয় প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসনে সরকার ২০১৭ সালে তিনটি প্রকল্পে ৯ হাজার ২৩৬ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। এর মধ্যে সিডিএ বাস্তবায়ন করছে ৭ হাজার ৬১৬ কোটি টাকার দুটি প্রকল্প। আর পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ১ হাজার ৬২০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্ব পেয়েছে। এসব প্রকল্পে নালা-নর্দমা ও খালের পুনঃখনন, বাঁধ নির্মাণ, জোয়ার প্রতিরোধক ফটক, খালের দুই পাশে প্রতিরোধ দেয়াল, সেতু ও কালভার্ট নির্মাণ এবং বালুর ফাঁদ নির্মাণের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে। কিন্তু নতুন ও শাখা খাল খননে কোনো বরাদ্দ রাখা হয়নি। এমনকি যে সংস্থাটি একসময় নতুন খাল খননের সুপারিশ করেছিল, সেই সিডিএ কর্তৃপক্ষও কোনো বরাদ্দ রাখেনি। ফলে চলমান প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত হলে নগরবাসী কী সুফল পাবে, তা নিয়ে বিশেষজ্ঞ ও সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের সংশয় আছে।

১৯৯২ সালের পর চট্টগ্রাম নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনে শত শত কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এসব প্রকল্পের অনেকগুলোর বাস্তবায়ন হয়েছে। কিন্তু জলাবদ্ধতার সমস্যা থেকেই গেছে। সঠিক পরিকল্পনার অভাবই যে এর একমাত্র কারণ, তা তো বলা বাহুল্য। বিশ্বের কোথাও সম্ভাব্যতা যাচাই এবং সংশ্লিষ্ট পেশাজীবীদের মত ছাড়া কোনো প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন হয় না। কিন্তু আমাদের দেশে প্রায় ক্ষেত্রে দেখা যায়, বিশেষজ্ঞের মতামত ছাড়াই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ফলে যে উদ্দেশ্যে প্রকল্প গ্রহণ করা হয়, তা পূরণ হয় না। এ ছাড়া বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে সমন্বয়হীনতা, দুর্নীতি ও লুটপাটের সমস্যা তো রয়েছেই।

জলাবদ্ধতার সমস্যা সমাধানের জন্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন, চট্টগ্রাম ওয়াসা, পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ সব সেবা সংস্থাকে সমন্বিতভাবে উদ্যোগ নিতে হবে। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ মেনে নতুন খাল ও শাখা খাল খনন করতে হবে। হাজার হাজার কোটি টাকার প্রকল্পগুলোর পুরোপুরি সুফল পেতে হলে নতুন খাল খনন এবং জলাধার স্থাপনের বিকল্প নেই।