‘যখন কোনো নতুন জায়গায় যাইবেন, দুইটা বিষয় পয়লা জানার চেষ্টা করবেন। ওই জায়গার মানুষ কী খায় আর পড়ালেখা কী করে। কাঁচাবাজারে যাইবেন, কী খায় এইডা দেখনের লাইগ্যা। আর বইয়ের দোকানে যাইবেন পড়াশোনা কী করে হেইডা জাননের লাইগ্যা।’ আহমদ ছফার যদ্যপি আমার গুরু বইটিতে উল্লেখ করা অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাকের এই উদ্ধৃতি সব সময়ই প্রাসঙ্গিক। যেহেতু ‘বই হচ্ছে অতীত আর বর্তমানের মধ্যে বেঁধে দেয়া সাঁকো’, এবং যেহেতু ‘লাইব্রেরির মধ্যে আমরা সহস্র পথের চৌমাথার উপরে দাঁড়াইয়া আছি’, সেহেতু নিজ নিজ ইতিহাস-ঐতিহ্যের সমৃদ্ধির জন্য বইয়ের আধারস্থল গ্রন্থাগারকে সমৃদ্ধ করার বিকল্প নেই। ইন্টারনেট সুবিধা চালু হওয়ার সুবাদেই হয়তো এই মহাসত্য আমাদের জাতীয় জীবন থেকে মুছে যেতে বসেছে।
গ্রন্থাগার ও গ্রন্থ সংস্কৃতির দৃশ্যমান বিকাশহীনতার এই সময়ে টিনের চালায় শুরু হওয়া রাজশাহীর একটি গ্রন্থাগার পাঁচতলার নতুন ভবন পেয়েছে। বইপ্রেমীদের জন্য এ এক বড় খবর। নগরের তালাইমারী শহীদ মিনার এলাকায় ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কের পাশের এই গ্রন্থাগারের নাম পদ্মা সাধারণ গ্রন্থাগার। সম্প্রতি এর নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। এই ভবনে গ্রন্থাগারের পাশাপাশি সেমিনার কক্ষ, শরীরচর্চা কেন্দ্র, শিশুদের বিনোদন কেন্দ্রসহ নানা সুবিধা রাখা হয়েছে।
স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় এই জায়গায় পাকিস্তানি বাহিনীর ক্যাম্প ছিল। যুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে ওই ক্যাম্প এলাকা ঘিরে কিছু সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড হাতে নেওয়া হয়। এরই একপর্যায়ে তরুণেরা ওই এলাকায় গ্রন্থাগার নির্মাণের উদ্যোগ নেন। ভারতের পক্ষ থেকে দেওয়া সাড়ে তিন কোটি টাকার অনুদানে সেখানেই এই ভবন গড়ে উঠেছে।
যেহেতু গ্রন্থ সংস্কৃতির সঙ্গে শিক্ষা-অনুশীলন-পরিশীলনের সম্পর্ক গভীর, সেহেতু শুধু গ্রন্থ থাকলেই সেটিকে আর আধুনিক সভ্যতায় গ্রন্থাগার বলা কঠিন। তার জন্য বইয়ের সঙ্গে শারীরিক-মানসিক বিকাশের অনুষঙ্গ থাকা জরুরি। সেই বিবেচনায় রাজশাহীর এই গ্রন্থাগারকে সারা দেশের জন্য একটি মডেল হিসেবে গণ্য করা যেতে পারে। প্রতিটি জেলায় যদি এই ধরনের একটি গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়, তাহলে বিশেষ করে তরুণ প্রজন্ম প্রকৃতপ্রস্তাবে পাঠমনস্ক হয়ে উঠবে।