রাজধানী ঢাকার কাছাকাছি জনবহুল জেলা শহর গাজীপুরের গণপরিবহনে একটা স্বস্তিদায়ক পরিবর্তনের সূচনা ঘটেছে। জেলা প্রশাসন বড় সড়কে অটোরিকশা, ইজিবাইক, লেগুনা ইত্যাদি ছোট যানবাহনের চলাচল নিষিদ্ধ ঘোষণা করার পর যানজট কমে গেছে। এতে জনগণ স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছে; তবে কম দূরত্বে চলাচলের জন্য যানবাহনের অভাব দেখা দেওয়ায় তারা সমস্যায়ও পড়েছিল। অবশ্য সেই সমস্যা দূর করতে গাজীপুরের জেলা প্রশাসন তৎপর হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার থেকে বিআরটিসির বাস সার্ভিস চালু করা হয়েছে।
গাজীপুরের শিববাড়ী থেকে শ্রীপুরের মাওনা পর্যন্ত এবং শিববাড়ী থেকে কোনাবাড়ী হয়ে কালিয়াকৈরের চন্দ্রা পর্যন্ত—এই দুটি রুটে বিআরটিসির ১৩টি বাস চলাচল করবে। জেলা প্রশাসন থেকে বলা হয়েছে, শুরু করা হলো ১৩টি বাস দিয়ে, যদি যাত্রীর সংখ্যা বেশি হয়, তাহলে বাসের সংখ্যাও বাড়ানো হবে।
এটি নিঃসন্দেহে একটি গণমুখী উদ্যোগ। একই ধরনের বাস সার্ভিস গাজীপুর থেকে ঢাকা মহানগরের যাত্রাবাড়ী, সদরঘাট ইত্যাদি স্থান পর্যন্ত চালু করা হলে জনগণ উপকৃত হবে। কারণ, ঢাকা ও গাজীপুরের মধ্যে প্রতিদিন বিপুলসংখ্যক মানুষ নিয়মিতভাবে চলাচল করে ব্যক্তিমালিকানাধীন বাস–মিনিবাস ও ছোট যানবাহনে। বিআরটিসির বড় বড় বাস চালু করা হলে যাত্রীদের দুর্ভোগ কমবে, তারা আর ছোট ছোট যানবাহনে গাদাগাদি করে চলাচল করতে চাইবে না, ফলে সেগুলো ধীরে ধীরে উঠে যাবে। সারা পৃথিবীতেই গণপরিবহনের ক্ষেত্রে বড় ও সুপরিসর যানবাহনকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়, যেন একটি বাহনে একসঙ্গে অনেক যাত্রী চলাচল করতে পারে। এতে করে সড়ক–মহাসড়কের ওপর অতিরিক্ত যানবাহন চলাচলের চাপ পড়ে না, যানজট অপেক্ষাকৃত কম হয়, দুর্ঘটনার আশঙ্কাও অনেক কমে যায়।
বিআরটিসি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান, গণপরিবহনে এর ভূমিকা যতটা প্রত্যাশিত, ততটা নেই। একসময় আন্তনগর সড়ক পরিবহনে বিআরটিসির বাস সার্ভিস ছিল। কিন্তু সেগুলো বেশি দিন চলতে পারেনি; প্রকৃতপক্ষে চলতে দেওয়া হয়নি। বিআরটিসির নিজের ব্যবস্থাপনাগত সমস্যা এবং সড়ক পরিবহন খাতের বেসরকারি মালিকানাধীন অংশের অন্যায্য নানা চাপের মুখে গণপরিবহনে বিআরটিসির ভূমিকা অতি নগণ্য। এর আগে নারায়ণগঞ্জে বিআরটিসির বাস সার্ভিস রাজনৈতিক চাপ ও মাস্তানির মুখে বন্ধ হয়ে গেছে। গাজীপুরের এই উদ্যোগের পেছনে যেহেতু জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার রয়েছেন, তাই আমরা প্রত্যাশা করি, এটা কোনো চাপের মুখেই বন্ধ হবে না, বরং ক্রমে আরও বিভিন্ন রুটে বিস্তৃত হবে।
সারা দেশেই মহাসড়ক থেকে তিন চাকার যানবাহন তুলে দেওয়া খুব জরুরি। তবে জাতীয় অর্থনীতিতে যে এসব যানবাহনের ভূমিকা আছে, তা–ও বিবেচনায় রাখা দরকার। গাজীপুরের জেলা প্রশাসন তিন চাকার যানবাহনগুলো নিষিদ্ধ না করে আঞ্চলিক শাখা সড়কগুলোতে পাঠিয়ে দিয়ে যথার্থ কাজই করেছে। গাজীপুরের এ দৃষ্টান্ত সারা দেশেই অনুসৃত হওয়া উচিত।