গুপী-বাঘা ভূতের রাজার কাছে খাওয়ার–পরার, যেখানে খুশি যাওয়ার ও মানুষকে মোহাবিষ্ট করার মতো গান গাওয়ার ক্ষমতা অর্জনের বর চেয়েছিল। এ দেশের চাষিদের ‘যেথা খুশি সেথা যাওয়ার’ কিংবা অভিজাত সমঝদার সমাজকে গীতরসধারায় মোহিত করার অভিলাষ নেই। খেতে–পরতে পারলেই তাঁরা খুশি। আর এ জন্য তাঁরা ধারদেনা করে ঘামে-শ্রমে ফসল ফলান। সেই ফসলের সম্ভাব্য ফলনের ওপর তাঁদের ভাত-কাপড়ের স্বপ্ন গড়ে ওঠে। কিন্তু প্রকৃতির আচমকা আঘাতে সেই স্বপ্ন কখনো কখনো ভেঙে পড়ে। এমনই এক আঘাতে দেশের কয়েকটি জেলার কয়েক হাজার ধানচাষির স্বপ্ন পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।
গত রোববার দিবাগত রাতে নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, ময়মনসিংহ, গোপালগঞ্জ, রাজশাহী, বরিশাল, গাইবান্ধাসহ বেশ কয়েকটি জেলার ওপর দিয়ে গরম বাতাস বয়ে গেছে। যে ধানগাছে সবে শিষ এসেছে, অর্থাৎ ‘ধানশিশু’ এখনো পরিপক্ব হয়নি, সেই ধান পুড়ে গেছে। ভোরে চাষিরা এসে দেখেন সব ধান চিটা হয়ে গেছে। কৃষি কর্মকর্তাদের তাৎক্ষণিকভাবে দেওয়া তথ্যমতে, এতে কমপক্ষে ২০ হাজার হেক্টর জমির বোরো ধান পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে। আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া জমির পরিমাণ আরও কয়েক গুণ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যেসব ধানখেতে ফুল আসছে, যেখান দিয়ে বাতাস বয়ে গেছে, সে জায়গায় ধানের ফুলের রেণুটা পুড়ে গেছে। যার ফলে পরাগায়ণ আর হবে না। ফলে যে ক্ষতি হয়েছে, তাকে ‘সর্বনাশ’ বলা যেতে পারে।
মাঠপর্যায়ে পরিদর্শন করে আসা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেছেন, যেসব কৃষকের ধান পুড়ে গেছে, তাঁদের অবস্থা স্বচক্ষে দেখলে চোখের পানি ধরে রাখা কঠিন।
এ অবস্থায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের ক্ষতি পুষিয়ে দিতে সরকার উদ্যোগ নিচ্ছে বলে জানা যাচ্ছে। সে ক্ষেত্রে কর্মকর্তাদের বিষয়টি সতর্কভাবে সামাল দিতে হবে। প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক যাতে ন্যায্য ক্ষতিপূরণ পান এবং ক্ষতিগ্রস্ত হননি এমন কেউ যাতে কারসাজি করে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণের অর্থ হাতিয়ে না নিতে পারেন, সেই দিকটি সর্বোচ্চ সতর্কতায় নিশ্চিত করতে হবে।
যদিও কর্মকর্তারা মনে করছেন, এ ক্ষতি সামগ্রিকভাবে জাতীয় খাদ্যনিরাপত্তায় তেমন প্রভাব ফেলবে না। কিন্তু এ বিষয়ে গঠনমূলক তদন্ত ও গবেষণা দরকার। আবার একই ধরনের গরম বাতাস বয়ে যাওয়ার কোনো আশঙ্কা আছে কি না, সে বিষয়ে আবহাওয়াবিদেরা প্রযুক্তি সহায়তায় খতিয়ে দেখতে পারেন।