খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়

শিক্ষার্থীরা দাবিদাওয়া আদায়ের জন্য আন্দোলন করেছেন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সেই দাবি মানেনি। উল্টো শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সমর্থন দিয়েছেন—এ অভিযোগ এনে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ চারজন শিক্ষককে কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠিয়েছে। এটা অযৌক্তিক।

২০২০ সালের ১ জানুয়ারি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বেতন-ফি কমানো, আবাসনসংকটের সমাধান, দ্বিতীয় পরীক্ষণের ব্যবস্থা করা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পরিপন্থী অধ্যাদেশের সংস্কার বা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামো নির্মাণে দুর্নীতি বন্ধের দাবিতে আন্দোলন করেন। এ দাবিগুলোর কোনোটি অযৌক্তিক নয়। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের দাবিদাওয়া না মেনে ঘটনার ৯ মাস পর শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে ‘উসকানি’ দেওয়ার অভিযোগ এনে চারজন শিক্ষকের প্রতি কারণ দর্শানো নোটিশ জারি করেছে। শিক্ষকেরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এ পদক্ষেপকে দুরভিসন্ধিমূলক বলে অভিহিত করেছেন।

গত জানুয়ারিতে শিক্ষার্থীদের সেই আন্দোলনের প্রতি অনেক শিক্ষকই সমর্থন জানিয়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে বেছে বেছে চারজন শিক্ষকের প্রতি কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়ার কারণ রাজনৈতিক বিদ্বেষমূলক বলে প্রতীয়মান হয়। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের রাজনীতি নেই, কিন্তু শিক্ষকদের রাজনীতি জোরেশোরেই চলেছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের এ নোটিশ সেই রাজনীতিরই অংশ। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার সমর্থকেরাও দুই ভাগে বিভক্ত, যাদের আনুষ্ঠানিক নাম স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদ। এ শিক্ষকদের একাংশ বর্তমান উপাচার্যের সমর্থক, আরেক অংশকে উপাচার্যের বিরোধী হিসেবে শনাক্ত করা হয়। উপাচার্যের মেয়াদ আছে মাত্র দুই মাস। এর আগে তিনি এ নোটিশ দেওয়ার মাধ্যমে তাঁর বিরোধী শিক্ষকদের প্রতি কঠিন বার্তাই দিতে চাইছেন বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের অভিযোগ।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শান্তি ও পড়াশোনার অনুকূল পরিবেশ বজায় রাখতে হবে। সে জন্য শিক্ষার্থীদের ন্যায়সংগত দাবি মেনে নেওয়া উচিত। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা রাজনীতিমুক্ত হওয়ার অর্থ এই নয় যে সেখানে শিল্প-সাহিত্য ও সংস্কৃতিচর্চা করতেও কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে হবে। অতএব, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ সংশোধন করে এমন বিধান সংযোজন করা উচিত, যাতে শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতা বিকাশের সুযোগ বাড়ে। শিক্ষার্থীরা তাঁদের শিক্ষার সমস্যা নিয়ে কথা বলবেন, দাবিদাওয়া জানাবেন—এটা স্বাভাবিক। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামো নির্মাণের কাজে দুর্নীতি হচ্ছে বলে যদি তাঁদের ধারণা হয়, তাহলে তা বন্ধ করার দাবি জানানোও তাঁদের ন্যায্য অধিকারের মধ্যেই পড়ে। কারণ, তাঁরাও দেশের প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিক।

আসলে সবকিছুর আগে প্রয়োজন রাজনীতির নামে শিক্ষকদের দলাদলি বন্ধ করা। চার শিক্ষকের প্রতি কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রত্যাহার করা হোক।