কৃষকের সহায়তায় দ্রুত পদক্ষেপ নিন

একদিকে চাষের সময় শেষ হয়ে যাচ্ছে, অন্যদিকে আমনের চারা পাওয়া যাচ্ছে না। এ অবস্থায় কৃষকদের মধ্যে হাহাকার দেখা দিয়েছে।

প্রথম আলোর ভোলা প্রতিনিধির পাঠানো খবর থেকে জানা গেছে, সাধারণত ভোলার বিভিন্ন হাটবাজারে ১ কেজি ধানের আমনের চারা ৬০ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হয়। কিন্তু এই সময়ে ৪০০ টাকায়ও কৃষক ধানের চারা কিনতে পারছেন না। অতিবৃষ্টির কারণে খেতের পাকা আউশ ধান পানিতে ডুবে থাকায় অঙ্কুর বের হয়েছে। ধান শুকাতেও ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে তাঁদের। এমন দুর্ভোগে পড়ে মুখের হাসি মিলিয়ে গেছে কৃষকের।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে মাঠপর্যায়ে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, ধানবীজের সংকট দেখা দিলে কৃষি অফিসের মাধ্যমে ইউনিয়ন পর্যায়ে বীজতলা তৈরি করে কৃষকদের চাহিদা মেটাতে হবে। কিন্তু বাস্তবে সেটি হয়নি। করোনাকালে জেলার বাইরে থেকে চারা আনাও সহজ নয়। এ ক্ষেত্রে ভোলার কৃষকদের আশঙ্কা, এক-তৃতীয়াংশ জমিতে আমন রোপণ সম্ভব হবে না।

তবে আমনের চারা সমস্যাটি কেবল ভোলার নয়। দক্ষিণাঞ্চলের প্রায় সব জেলার বিরাট অংশ জোয়ারের পানিতে ডুবে যাওয়ায় আমনের বীজতলা ও রোপণ করা চারা দুটোই মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অনুরূপ খবর এসেছে ফেনী, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী, বরগুনা, পিরোজপুর, পটুয়াখালী থেকেও। কৃষি কর্মকর্তারা বলেছেন, যেসব জমিতে জোয়ারের আগে ধান রোপণ করা হয়েছে, সেখানে সব চারা ভেসে যায়নি। ভালো চারাগুলো ভাগ করে ফাঁকা জায়গায় রোপণ করে ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে নেওয়া যেতে পারে। বীজতলা ছাড়া সরাসরি আমন রোপণেরও পরামর্শ দিয়েছেন কৃষি কর্মকর্তারা।

এদিকে উত্তরাঞ্চলের অনেকগুলো জেলা দুই মাস ধরে বন্যায় প্লাবিত থাকায় কৃষকেরা সময়মতো আমন চাষ করতে পারেননি। আমন চাষের সময় প্রায় শেষ। খুব বেশি হলে ১০ দিন আমনের চারা রোপণের সময় পাওয়া যাবে। এর মধ্যে আমন চাষ সম্ভব না হলে খেত খালি থাকবে। শেষ পর্যন্ত আমনের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা দুরূহ হবে। চলতি বছর দেড় শ কোটি মেট্রিক টন আমনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল।

এই পরিস্থিতিতে জরুরি ভিত্তিতে সরকারকে পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রথমত, দাম যা–ই হোক, কৃষকের চাহিদা মোতাবেক আমনের চারা পৌঁছাতে হবে। তারপরও যেসব খেতে আমন চাষ করার সম্ভব হবে না, সেখানে বিকল্প চাষের কথা ভাবতে হবে। প্রয়োজনে কৃষিবিজ্ঞানীদের পরামর্শ নিতে হবে। করোনার শুরুতে সম্মিলিত উদ্যোগ নেওয়ায় হাওরের ধান কাটার কাজ সুষ্ঠুভাবে শেষ করা সম্ভব হয়েছে। আমনের চারাসংকটেও চাই সম্মিলিত ও টেকসই পদক্ষেপ।