কৃষি উৎপাদনে সাফল্যের জন্য আবহাওয়ার আগাম তথ্য জানার কোনো বিকল্প নেই। নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগের আগাম তথ্য জেনে সে অনুযায়ী প্রস্তুতি নিতে পারেন কৃষকেরা। এতে নানা ক্ষয়ক্ষতি থেকে রেহাই পান তাঁরা। সেই লক্ষ্যে জেলায় জেলায় কৃষকদের জন্য বসানো হয় রেইন গজ মিটার নামে দামি যন্ত্র। দুই বছর আগে মাদারীপুর জেলার ৫৬টি ইউনিয়নে এক কোটির বেশি টাকা খরচ করে এ যন্ত্র বসানো হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো তথ্যই পাননি কৃষকেরা। যত্ন ও অবহেলার কারণে বেশির ভাগ যন্ত্র অকেজো হয়ে পড়ে আছে। এর পেছনে অর্থ তো অপচয় হলোই, কৃষকেরাও বঞ্চিত হলেন সুফলপ্রাপ্তি থেকে। এর মাধ্যমে কৃষি বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দায়িত্বহীনতাই প্রকাশ পেল।
প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে এক প্রকল্পে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ইউনিয়নগুলোতে রেইন গজ মিটার ও এর যন্ত্রাংশ বসানো হয়। তাপমাত্রা, আর্দ্রতা, বায়ুপ্রবাহ, বৃষ্টিপাত, ঝড়ের পূর্বাভাসসহ ১০টি বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ ও তা কৃষকদের মধ্যে প্রকাশের জন্য যন্ত্রটিতে দেওয়া হয় ইন্টারনেট সংযোগ। কৃষকদের মুঠোফোনেও এসব তথ্য পৌঁছে যাওয়ার কথা। যন্ত্রগুলোর দেখাশোনার জন্য উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু কেনাকাটা ও প্রকল্প শেষ, তাঁদের দায়িত্বও শেষ!
সদর ও কালকিনি উপজেলার চিত্র হচ্ছে, সেখানকার ইউনিয়নগুলোতে রেইন গজ মিটারগুলো বিকল হয়ে পড়ে আছে। তথ্য বোর্ডেও কোনো হালনাগাদ তথ্য নেই। আলীনগর ইউনিয়নের কৃষক গণেশ সরকার বলেন, ‘আমরা যদি তিন দিন আগেই জানতে পারতাম কুয়াশা পড়বে, নাকি বৃষ্টি হবে অথবা বেশি গরম। তাহলে আমরা সেই হিসাব করে ফসলাদি চাষবাস ও রক্ষণাবেক্ষণ করতে পারতাম।’ এখন কিছু যন্ত্র ঠিক আছে ও সেবা দিচ্ছে দাবি করলেও সেসব কোন ইউনিয়নে বলতে পারেননি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। প্রথম আলোর স্থানীয় প্রতিনিধি জানালেন, অনেক যন্ত্রের হদিসও জানেন না কর্মকর্তারা। এখন যন্ত্রগুলোর আধুনিকায়ন ও সংস্কারের জন্য সরকার গোটা দেশে ৯৪ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। সেই বরাদ্দ এসেছে মাদারীপুরেও। যেখানে যন্ত্রেরই হদিস নেই, থাকলেও নষ্ট হয়ে গেছে, সেখানে এ বরাদ্দ কী কাজে ব্যবহৃত হবে, এমন প্রশ্নেরও কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি কর্মকর্তারা।
মাদারীপুরের এ করুণ চিত্র থেকে আমরা সন্দিহান, বাকি জেলার যন্ত্রগুলো কী অবস্থায় আছে। যন্ত্রগুলোর দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের এ অবহেলা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। তঁাদের জবাবদিহির আওতায় আনা হোক।