বর্ষা মৌসুমের আগেই কাজ শেষ করুন

কুমার নদের খননকাজ

কুমার নদের খননকাজ পরিদর্শন করে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এ কে এম ওহেদউদ্দিন চৌধুরী যে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন, তা অযৌক্তিক নয়। যে গতিতে প্রকল্পের কাজ চলছে তাতে এর কাজ কবে শেষ হবে, সেটাই বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। কুমার নদের খনন ছিল এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি। এ নিয়ে ফরিদপুরে আন্দোলন-সংগ্রামও হয়েছে। এর ওপর দু–তিনটি জেলার লাখ লাখ মানুষের জীবন-জীবিকা নির্ভরশীল। একসময়ে এই নদের ওপর দিয়ে স্টিমার-লঞ্চ চললেও এখন মরা খাল। শুকনো মৌসুমে কোনো পানি থাকে না।

উদ্বেগের বিষয় হলো, ২০১৭ সালের এপ্রিলে নদের খননকাজ উদ্বোধন করা হলেও ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে এসে শেষ হয়েছে মাত্র ১৩ শতাংশ। বাংলাদেশ নৌবাহিনীর তত্ত্বাবধানে পানি উন্নয়ন বোর্ডের এই প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কাজ শেষ করার কথা রয়েছে চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর। হাতে সময় আছে মাত্র ১০ মাস। বাংলাদেশ নৌবাহিনীর প্রতিষ্ঠান (ডকেয়া ডান ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্স লিমিটেড) এই খননকাজের দায়িত্বে নিয়োজিত। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ১৭৬ কোটি টাকা।

কুমার নদের খননকাজ শেষ হলে ফরিদপুরের সদর, নগরকান্দা, সালথা, বোয়ালমারী, ভাঙ্গা এবং পাশের গোপালগঞ্জ জেলার মুকসুদপুর উপজেলার ২৩ হাজার ৫০০ হেক্টর কৃষিজমির সেচের আওতায় আসবে বলে ধারণা করা যাচ্ছে। ফরিদপুর শহরের টেপাখোলার মদরখালী থেকে উৎপত্তি হয়ে কুমার নদের একটি ধারা জেলার সদর, নগরকান্দা, সালথা, বোয়ালমারী পর্যন্ত গিয়েছে এবং অপর ধারাটি ভাঙ্গা উপজেলার মধ্য দিয়ে ৭১ কিলোমিটার ঘুরে গোপালগঞ্জ জেলার মুকসুদপুর উপজেলা পার হয়ে মাদারীপুরের বিল রুটে গিয়ে পড়ে। সব মিলিয়ে এর দৈর্ঘ্য ১৩১ কিলোমিটার। প্রকল্পের আওতায় নদী খনন ও রেগুলেটর নির্মাণের মাধ্যমে শুষ্ক মৌসুমে নদীতে কমপক্ষে ৬ ফুট গভীরতায় পানিপ্রবাহ রাখার কথা বলেছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

এলাকাবাসী জানিয়েছেন, একসময় কুমার নদ দিয়ে বড় বড় লঞ্চ চলাচল করত। খননের মাধ্যমে নদের নাব্যতা ফিরিয়ে আনা সম্ভব হলে কৃষির উৎপাদন বাড়ার পাশাপাশি নৌযোগাযোগও সহজতর ও সাশ্রয়ী হবে।

সময়মতো কাজ শেষ না হলে প্রকল্পের খরচ যেমন বাড়ে, তেমনি নানা সমস্যা দেখা দেয়। নদের খননকাজ শেষ হওয়ার আগে এলাকাবাসী কোনো সুফল আশা করতে পারে না। প্রধানত শুকনো মৌসুমেই নদী খননের কাজটি করতে হয়। বর্ষার সময় পলি ও স্রোতের কারণে খননকাজ ব্যাহত হয়। তাই আশা থাকবে, আগামী বর্ষা মৌসুমের আগেই পুরো কাজ শেষ করতে হবে। কেননা, বর্ষার পলি ও স্রোত খনন করা অংশ ভরাট করে ফেলতে পারে। এ ব্যাপারে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাড়তি সতর্কতা প্রত্যাশিত।