১ কোটি ৫ লাখ টাকায় প্রায় দেড় কিলোমিটার গ্রামীণ সড়ক তৈরিতেও বড় ধরনের ঘাপলার অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে। এ ঘটনা ঘটেছে কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার যদুবয়রা ও নন্দলালপুর ইউনিয়নে। গত অক্টোবরে শুরু হওয়া কাজ এপ্রিলে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও যুক্তিসংগত কারণ ছাড়াই তা বিলম্বিত হয়। শেষ পর্যন্ত কাজের গুণমানের সঙ্গে আপস করে অর্থবছর শেষ হওয়ার দিকে নজর দিয়ে কাজটা জোড়াতালি দিয়ে শেষ করা হয়। এর তদারকিতে যে উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তরের গাফিলতি ছিল, তা স্পষ্ট। বিস্ময়কর হচ্ছে, গ্রামবাসীর প্রতিবাদের মুখে প্রথম আলো প্রতিনিধি যখন সরেজমিন পরিদর্শন করে নিম্নমানের কাজের ভিডিও দেখালেন, তখনো উপজেলা প্রকৌশলী ‘শতভাগ কাজ শেষ’ এবং ‘কাজের মান সন্তোষজনক’ বলে দাবি করেন। এটা ইতিবাচক যে এই কর্মকর্তাকে দ্রুততার সঙ্গে বদলি করা হয়েছে, কিন্তু এটাই যেন শেষ কথা না হয়।
আমরা কুষ্টিয়ার নির্বাহী প্রকৌশলীকে ধন্যবাদ দিই যে তিনি অনিয়মের অভিযোগ পাওয়ার পরপরই এর প্রতিকারে পদক্ষেপ নিয়েছেন। গতকাল তিনি আমাদের জানিয়েছেন যে এ-বিষয়ক অনিয়ম খতিয়ে দেখতে ইতিমধ্যে দুটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। খুলনার অতিরিক্ত প্রকৌশলীর নেতৃত্বাধীন কমিটি আগামী সপ্তাহেই আসতে পারে। আমরা আশা করব, গ্রামীণ মানুষের সরাসরি স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়টি আমলাতান্ত্রিক দীর্ঘসূত্রতার কবলে পড়বে না। জানতে চাইলে কুষ্টিয়ার ডেপুটি কমিশনার মঙ্গলবার আমাদের বলেন, সড়ক নির্মাণকাজে কোনো অভিযোগ পেলে তিনি তা বিবেচনায় নেন এবং এলজিইডিও বিষয়গুলোকে সংবেদনশীলতার সঙ্গে বিবেচনায় নেয়।
সারা দেশের সড়ক, সেতু ইত্যাদি নির্মাণ বা সংস্কারে আমাদের সার্বিক অভিজ্ঞতা বেশ তিক্ত। সাধারণভাবে এটাই বাস্তবতা যে নির্মাণকাজের মান খারাপ, কিন্তু খরচ বেশি। নিম্নমান থাকার প্রমাণ হলো নির্মাণের অল্পকাল পরেই তা ধসে যাচ্ছে। কুমারখালীর গ্রামীণ সড়কটি কাঁচা। এবারই প্রথমবারের মতো দুই ইউনিয়নকে যুক্ত করা পাকা সড়ক ব্যবহারে এলাকাবাসী স্বপ্ন দেখেছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে তারা দেখল যে সীমাহীন অযত্ন-অবহেলায় সড়কটি তৈরি করা হলো। পাথর-বিটুমিন এতটাই পলকা যে খালি হাতেই তা তুলে ফেলা সম্ভব হয়েছে। আর প্রতিবাদের পরে ঠিকাদার নাটকীয়ভাবে তাঁর ভাষায় কিছু জায়গায় সৃষ্ট সমস্যা তিনি দূর করেছেন। পুনরায় মেরামত করেছেন। কিন্তু স্পষ্টতই তাঁর তথাকথিত সংস্কার কর্মসূচি ওই সড়ককে সুরক্ষা দেবে কি না, তা প্রশ্নবিদ্ধ।
গ্রামীণ সড়কের দুর্নীতি আসলে বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এর তদারকিতে ইউনিয়ন পরিষদকে যদি কার্যকরভাবে যুক্ত করা যেত, তাহলে পরিস্থিতির উন্নতি ঘটানো সম্ভব। বাংলাদেশ সংবিধানের নির্দেশনা কিন্তু তেমনই। স্থানীয় সরকারের নিবিড় তদারকিতে গ্রামীণ উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে হবে। স্থানীয় ঠিকাদার যদি জানতেন যে নিম্নমান দেখলে ইউপির জনপ্রতিনিধিরাই কাজ থামিয়ে দিতে পারেন, তাহলে তাঁরা অনিয়ম করতে বেপরোয়া হতেন না।