কার দোষে ১৬ মাস বন্ধ আছে এই কেন্দ্র

সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে স্বাস্থ্যসেবার প্রসার ঘটেছে। সরকারের নীতিনির্ধারকদের দাবি, জনগণের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে আবার গ্রামে গ্রামে কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন করছে সরকার। কিন্তু এই সরকারের আমলে মৌলভীবাজারের মোস্তফাপুর স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি এক বছরের অধিক সময় বন্ধ থাকা বা রাখার কী যুক্তি থাকতে পারে?

মৌলভীবাজার থেকে প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিনিধির পাঠানো খবর থেকে জানা যায়, চিকিৎসক না থাকায় তিন দশক আগে প্রতিষ্ঠিত মোস্তফাপুর স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্রটি মে মাস থেকে বন্ধ আছে। এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের উপসহকারী মেডিকেল কর্মকর্তা সৈয়দ ফখরুল জানান, ১৯৮৭ সালে নেদারল্যান্ডসের আর্থিক সহায়তায় স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি উদ্বোধনের কিছুদিন পরই তিনি প্রেষণে সেখানে যোগ দেন এবং ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে অবসরে যাওয়ার আগপর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। এরপর অন্য একজন চিকিৎসক তাঁর স্থলাভিষিক্ত হলেও করোনার প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় মে মাসে তাঁকে অন্যত্র বদলি করা হয়। এরপর থেকে স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি বন্ধ। প্রথম আলোর প্রতিবেদক সরেজমিন দেখতে পান, স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ভবনগুলো খালি পড়ে আছে। দরজায় তালা ঝুলছে, জানালাগুলো ভাঙাচোরা। ভবনের ভেতরে সাপ, ব্যাঙ ও পোকামাকড় বাসা বেঁধেছে।

করোনার প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় স্বাস্থ্য বিভাগ চিকিৎসককে স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে প্রত্যাহার করে নিয়েছে। করোনার প্রকোপ তো কেবল ওই এলাকায় সীমিত ছিল না, এখনো নেই। দেশের প্রায় সব স্থানে কমবেশি করোনা আঘাত হেনেছে। তাই বলে কি সেসব স্থানে হাসপাতাল, স্বাস্থ্যকেন্দ্র অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ থাকবে? একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এক বছরের বেশি চিকিৎসক না থাকার অর্থ সেই এলাকার চিকিৎসাপ্রার্থীদের বঞ্চিত করা। স্বাস্থ্যকেন্দ্র বন্ধের আগে এখানে ১০০ থেকে ১৫০ জন রোগী আসত। গ্রামের দরিদ্র মানুষের পক্ষে জেলা সদরের হাসপাতালে যাওয়া সম্ভব নয়। বিশেষ করে নারীদের জন্য দূরবর্তী স্থানে যাওয়া আরও দুরূহ।

এ ব্যাপারে সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা এই কেন্দ্রের দায়িত্ব তাঁদের নয় বলে দায় এড়ানোর চেষ্টা করেছেন। কেন্দ্রটি মৌলভীবাজার পরিবার পরিকল্পনা অফিস ও স্বাস্থ্য বিভাগ যৌথভাবে পরিচালনা করত। ভাগের মা অন্ন না পাওয়ার মতো এখন এর দায়িত্ব কেউ নিতে চান না। দায়িত্ব যাঁর বা যাঁদেরই হোক না কেন, এ রকম একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র মাসের পর মাস বন্ধ থাকতে পারে না। এ বিষয়ে মৌলভীবাজারের সিভিল সার্জন বলেছেন, করোনার প্রকোপ কমলে চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া হবে। তাঁর এ বক্তব্যের জবাবে বলব, কোনো অজুহাতেই স্বাস্থ্যকেন্দ্র বন্ধ থাকতে পারে না। অবিলম্বে মোস্তফাপুর স্বাস্থ্যকেন্দ্রে একজন চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া হোক। খোলা হোক বন্ধ স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি।