হঠাৎ ভোজ্যতেল উধাও

কারসাজিকারীদের খুঁজে বের করুন

সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

ইউক্রেন যুদ্ধে বিশ্বব্যাপী পণ্য সরবরাহ বিঘ্নিত হয়েছে, এটা পুরোনো খবর। নতুন খবর হলো ঈদের আগে ও পরে বাজার থেকে ভোজ্যতেল উধাও হয়ে যাওয়া। প্রথম আলোর খবর অনুযায়ী, দাম বাড়ানোর পরও বাজারে ভোজ্যতেল মিলছে না। শুক্রবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারসহ বিভিন্ন বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, বেশির ভাগ ক্রেতা শূন্য হাতে ফিরে গেছেন। আবার কোনো কোনো দোকানে পুনর্নির্ধারিত দামের চেয়েও বেশি দামে ক্রেতা তেল কিনতে বাধ্য হয়েছেন।

প্রথমেই যে প্রশ্নটি আসে, তা হলো সংকট মোকাবিলায় সরকার কতটা প্রস্তুত ছিল বা আদৌ ছিল কি না? এ কথা ঠিক যে ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেলসহ অনেক নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়েছে। এ অজুহাতে ভোজ্যতেল আমদানিকারকেরাও দফায় দফায় দাম বাড়িয়ে নিয়েছেন। রোজার সময় তাঁরা আরেক দফা দাম বাড়ানোর জন্য চাপ দিলেও সরকার রাজি হয়নি।

ঈদের দুই দিন পর বৃহস্পতিবার সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ৩৮ টাকা বাড়িয়ে ১৯৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। বোতলজাত প্রতি লিটার সয়াবিন তেল খুচরা পর্যায়ে বিক্রি হচ্ছে ১৯৮ টাকায়। আর পাঁচ লিটারের বোতলের দাম ৯৮৫ টাকা। এ ছাড়া খোলা সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ১৮০ টাকা এবং খোলা পাম তেল প্রতি লিটার ১৭২ টাকা বিক্রয়মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। সয়াবিন তেলের বাড়তি দাম নির্ধারণের পরও রাজধানীর অধিকাংশ বাজারই ভোজ্যতেলশূন্য থাকার কারণ কী?

ইতিমধ্যে ইন্দোনেশিয়া পাম অয়েলের রপ্তানি বন্ধ এবং আর্জেন্টিনা রপ্তানি সীমিত করে দিয়েছে। আমাদের ব্যবসায়ীরা এটাকে মওকা হিসেবে নিয়েছেন। তঁারা ভেবেছেন, দাম আরও বাড়বে। এ কারণে তেল বাজারে না ছেড়ে মজুত করে রেখেছেন। ইন্দোনেশিয়া কিংবা আর্জেন্টিনার ঘোষণার প্রভাব বাজারে সঙ্গে সঙ্গে আসার কথা নয়। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেছেন, দাম বাড়ানো হবে, এ খবর পেয়েই ব্যবসায়ীরা মজুত করে রেখেছেন।

দেশে মজুতবিরোধী আইন আছে। কেউ ইচ্ছা করলেই ভোজ্যতেলের মতো অতি প্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্য মজুত করে রাখতে পারেন না। কিন্তু তাঁরা রেখেছেন। অনেক গণমাধ্যমে সেই ছবিও ছাপা হয়েছে। মুক্তবাজার অর্থনীতিতে সরকার বাজার পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না ঠিক; কিন্তু নজরদারি তো করতে পারে। সে ক্ষেত্রে ক্রেতাসাধারণকে এ রকম ভোগান্তিতে পড়তে হতো না।

অন্যান্য বিষয়ের মতো ভোজ্যতেলের ক্ষেত্রেও সরকার শুরু থেকে তাৎক্ষণিকতা বজায় রেখে চলেছে। সংকট জনগণের ঘাড়ের ওপর চেপে না বসা পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান নিষ্ক্রিয় থেকেছে। ইউক্রেন যুদ্ধ আরও প্রলম্বিত হবে বলেই বিশ্লেষকেরা মনে করেন। সে ক্ষেত্রে ভোজ্যতেলসহ সব আমদানি পণ্যের দাম আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে। সেই সংকট কাটাতে এখনই টেকসই পরিকল্পনা নেওয়া প্রয়োজন। সীমিত আয়ের মানুষ যাতে তেল পেতে পারেন, সে জন্য টিসিবির মাধ্যমে স্বল্প দামে তেল বিক্রি বাড়াতে হবে। সেই সঙ্গে আমদানি শুল্ক কমিয়ে তেলের দাম কমানো যেতে পারে। এখনো যাঁরা আন্তর্জাতিক বাজারের দোহাই দিয়ে বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করেছেন, ক্রেতাকে পণ্য না দিয়ে মজুত করে রেখেছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হোক।