কাটাখালী পৌর মেয়রের স্বেচ্ছাচারিতা

সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

জলাবদ্ধতা নিরসনে পৌরসভা ও সিটি করপোরেশন এলাকাগুলোতে উন্নয়ন প্রকল্পের শেষ নেই। কিন্তু সাধারণ মানুষ সেসব উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের আদৌ সুফল পান কি না, প্রশ্ন থেকেই যায়। খাল দখলমুক্ত বা খনন করা হলেও সেগুলো আবার বেহাত হয়ে যাচ্ছে। এর পেছনে স্থানীয় ক্ষমতাধর ব্যক্তি, রাজনৈতিক নেতারা তো আছেনই, জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধেও অভিযোগ বিস্তর। রাজশাহীর কাটাখালী পৌর এলাকায় সরকারি খালের খননের বছর যেতে না যেতেই এর ওপরই অবৈধভাবে ভবন নির্মাণ করছেন পৌর মেয়র। ইতিমধ্যে দুটি ভবনও উঠে গেছে। জেলা প্রশাসকের বাধাও মানেননি তিনি। কয়েকজন কাউন্সিলরও তাঁর এ অন্যায় কাজের বিপক্ষে।

প্রথম আলোর প্রতিবেদনে জানা যাচ্ছে, বছরখানেক আগে ১৭ কোটি টাকা ব্যয়ে খালটি পুনঃখনন ও সংস্কার করা হয়েছিল। এখন সেই খালের ওপর দুটি ভবন নির্মাণ করছেন পৌর মেয়র আব্বাস আলী। তিনি পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতিও। তাঁর দাবি, খাল পুনঃখননের সময় উচ্ছেদ হওয়া ব্যবসায়ীদের পুনর্বাসন করতে ভবন দুটি নির্মাণ করা হচ্ছে। অথচ খাল সংস্কারের আগেই ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর করেছিলেন তিনি। এতে নাকি পৌরসভারও ‘আয়ের উৎস’ তৈরি হবে। যদিও ভবন নির্মাণের কোনো সিদ্ধান্তই পৌরসভা থেকে নেওয়া হয়নি। মেয়র এ–ও স্বীকার করলেন, ভবন নির্মাণের জন্য ভূমি কার্যালয় থেকেও অনুমতি নেওয়া হয়নি।

এখন খালের ওপর ঝুঁকিপূর্ণ ভবন নির্মাণের কারণে পানিপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। পৌরসভার কয়েকজন কাউন্সিলর জেলা প্রশাসকের কাছে মৌখিকভাবে অভিযোগ করেছেন। এরপর প্রশাসন ভবনের কাজ বন্ধ করে দিলেও কয়েক দিন পর আবারও সেই কাজ চলছে। আপত্তি জানানো কাউন্সিলরদের ভাষ্য, খাল পুনঃখননের কারণে পৌর এলাকায় জলাবদ্ধতা থাকবে না। এখন খালের ওপর ভবন নির্মাণ করলে আবার জলাবদ্ধতা সৃষ্টি করবে। এ ছাড়া খালের ওপর তিনতলা ভবনও ঝুঁকিপূর্ণ। সামান্য ভূমিকম্পে যেকোনো সময় ভেঙে যেতে পারে।

পবা উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) বক্তব্য থেকে জানা গেল, ভবন নির্মাণ বন্ধের নির্দেশকে কোনো তোয়াক্কাই করছেন না মেয়র। কারণ দর্শানোর নোটিশের উত্তর দেওয়ারও প্রয়োজন মনে করেন না তিনি। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের পুনর্বাসনে বিকল্প পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে, তাই বলে ক্ষমতার দম্ভ দেখিয়ে এভাবে সরকারি একটি খাল দখলে মত্ত হবেন একজন জনপ্রতিনিধি, সেটি মেনে নেওয়া যায় না। ভবনগুলো উচ্ছেদ করে খালটিকে সুরক্ষিত করা হোক। স্থানীয় প্রশাসনের উচিত মেয়রের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া।