কাঁচাবাজার হচ্ছে হাসপাতাল

সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম মহাখালীতে সিটি করপোরেশন নির্মিত মহাখালী মার্কেটকে ৫০০ শয্যার আধুনিক হাসপাতালে রূপান্তর করার ঘোষণা দিয়েছেন। কোভিড রোগীদের চিকিৎসা ও পরীক্ষার জন্য এটি আগে থেকেই আইসোলেশন সেন্টার হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছিল। তিনি বলেছেন, মহাখালীর কাঁচাবাজারের বিকল্প হিসেবে আমিনবাজারের বাজারটি সম্প্রসারণ করা হবে। ব্যবসায়ীদের এতে আপত্তি নেই।

মেয়র যুক্তি দেখিয়েছেন, মহাখালীতে যে স্থানে মার্কেট করা হয়েছিল, সেটি ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য সুবিধাজনক নয়। তা ছাড়া ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অধীনে তিনটি হাসপাতাল থাকলেও উত্তরে একটিও নেই। আমরাও মনে করি, মার্কেটের জন্য নির্মিত স্থাপনাটি অব্যবহৃত অবস্থায় ফেলে রাখার কোনো যুক্তি নেই। এ বিবেচনা থেকেই হয়তো মেয়র আতিকুল ইসলাম মার্কেটটি হাসপাতালে রূপান্তরের ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। কিন্তু মার্কেট আর হাসপাতালের অবকাঠামো এক নয়। মার্কেটকে স্থায়ীভাবে হাসপাতালে রূপ দিতে আরও প্রচুর অর্থ ব্যয় করতে হবে।

ঢাকা উত্তরের মেয়র কাঁচাবাজারকে হাসপাতালে রূপান্তরের যুক্তি হিসেবে ঢাকা উত্তরে একটিও হাসপাতাল না থাকার যুক্তি দিয়েছেন। এখানে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হচ্ছে কাঁচাবাজারকে কেন হাসপাতালে রূপান্তর করতে হবে? আর স্থানটি যদি ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য উপযুক্ত না হয়ে থাকে, তাহলে কেন সেখানে কোটি কোটি টাকা খরচ করে মার্কেট করা হলো? গত বছর ডিএনসিসি সেখানে ৭০০টি দোকান বরাদ্দের জন্য দরপত্রও আহ্বান করেছিল। কোভিডের কারণে সেই প্রক্রিয়া থেমে আছে। এক বছরের ব্যবধানে মার্কেটের প্রকল্প থেকে কেন সরে আসতে হলো?

উল্লেখ্য, জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় ২০০৬ সালের ৪ অক্টোবর ‘ঢাকা শহরের তিনটি পাইকারি কাঁচাবাজার নির্মাণ প্রকল্প’ অনুমোদন পায়। অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশন ২০০৭ সালে এ তিন মার্কেটের নির্মাণকাজ শুরু করে। আমিনবাজারে ৩৩ বিঘা, মহাখালীতে ৭ বিঘা ও যাত্রাবাড়ীতে ৫ বিঘা জমির ওপর এ পরিকল্পিত কাঁচাবাজার নির্মাণ করে সিটি করপোরেশন। শুরুতে প্রকল্পের আকার ছিল ২০৬ কোটি টাকা। পরে আকার বেড়ে দাঁড়ায় ৩৩১ কোটি টাকা।

কারওয়ান বাজার ডিএনসিসির ২৪ বিঘা জায়গার ওপর আড়তসহ বিভিন্ন সাইজের ২ হাজার ৩০১টি দোকান রয়েছে। ব্যবসার ধরন অনুযায়ী আটটি সমিতিও গড়ে উঠেছে সেখানে। সিটি করপোরেশন কয়েক বছর আগে মার্কেট নির্মাণের কাজ শেষ করলেও কারওয়ান বাজার থেকে সেটি সরানো যাচ্ছিল না ব্যবসায়ীদের আপত্তির কারণে। ডিএনসিসির সাবেক মেয়র আনিসুল হক কারওয়ান বাজার থেকে মহাখালীতে কাঁচাবাজার সরানোর চেষ্টাও নিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর মৃত্যুর পর সেটি থেমে যায়।

এটা পরিষ্কার যে মহাখালীতে কাঁচাবাজার নির্মাণের আগে এর সম্ভাব্যতা ও ভালো–মন্দের বিষয়টি যথাযথভাবে যাচাই করা হয়নি। কথায় বলে ‘ভাবিয়া করিও কাজ, করিয়া ভাবিও না।’ আর এখানে সরকার, সিটি করপোরেশন কাজ করার পর ভাবতে শুরু করেছে। ২০০৬ সালে মহাখালী মার্কেট নির্মাণের প্রকল্প নেওয়া হয়। এর মধ্যে অনেকবার সরকার বদল হয়েছে। মেয়র বদল হয়েছেন। অবিভক্ত সিটি করপোরেশন বিভক্ত হয়েছে। কিন্তু কারওয়ান বাজার থেকে কাঁচাবাজারটি সরানো সম্ভব হয়নি। এই ব্যর্থতার জবাব কী।

যদি ডিএনসিসি ব্যবসায়ীদের চাপে বা ব্যবসায়ীদের সেখানে না নিতে পেরে মার্কেটকে হাসপাতাল করতে বাধ্য হয়, সেটি আরও দুঃখজনক। সরকার বা সিটি করপোরেশন মহলবিশেষের কাছে জিম্মি হতে পারে না। বৃহত্তর জনগণের স্বার্থই তাদের দেখতে হবে।