জনগণের অর্থ ব্যয় করে সড়ক, সেতু, ইমারত, নালা, নর্দমা ইত্যাদি অবকাঠামো নির্মাণের উদ্দেশ্য জনগণের সেবা পাওয়া নিশ্চিত করা। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে এসব কাজের মূল উদ্দেশ্য ভেস্তে যায়। কারণ, নির্মাণকাজের গুণগত মান নিশ্চিত করা হয় না। সড়ক নির্মাণ বা মেরামত করার অল্প কিছুদিন পরই স্থানে স্থানে তা ভেঙে যায়, খানাখন্দ সৃষ্টি হয়; যানবাহন ও মানুষের চলাচলে দুর্ভোগ ফিরে আসে।
কিছু সময় পর সেই সড়ক আবার মেরামত করার প্রয়োজন দেখা দেয়। সে জন্য আবার অর্থ বরাদ্দ করা হয়, আবার মেরামতের কাজ চলে এবং কিছুকাল পর আবারও তা ভেঙেচুরে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। এভাবে চক্রাকারে জনগণের অর্থের অপচয় চলতে থাকে, তাদের দুর্ভোগের অবসান ঘটে না।
শুধু সড়ক নয়, ইমারত নির্মাণের ক্ষেত্রেও দেখা যায়, নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করার ফলে সেগুলো টেকসই হয় না; এমনকি কখনো কখনো নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার আগেই ইমারতের ছাদ ধসে পড়ে। এমনকি কখনো কখনো পুরো ইমারতই হেলে পড়ে যাওয়ার ঘটনাও ঘটে থাকে। এসবের কারণ লাগামহীন দুর্নীতি। জনগণের অর্থ লোপাট করার এ প্রক্রিয়া সারা দেশেই অবিরাম চলছে। বুধবার প্রথম আলোয় প্রকাশিত এক সচিত্র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ সরকারি মডেল উচ্চবিদ্যালয়ে একটি নালা নির্মাণ করার ছয় দিন পরই সেটির এক পাশের দেয়াল ভেঙে পড়েছে। জেলা পরিষদের অর্থায়নে নির্মিত ওই নালার কাজ শুরু হওয়ার পর থেকেই এলাকাবাসী অভিযোগ করে আসছিলেন যে নির্মাণকাজের গুণগত মান ঠিক নেই। সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারের বিরুদ্ধে ‘নয়ছয়ের অভিযোগ’ উঠলে কমলগঞ্জ পৌরসভার মেয়র সরেজমিন নির্মাণকাজ পরিদর্শন করে দেখতে পান অভিযোগ সঠিক। ফলে তিনি ঠিকাদারকে কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন। দুই দিন কাজ বন্ধ রাখার পর ঠিকাদার নির্মাণকাজের গুণগত মানের নিশ্চয়তা দিয়ে আবার কাজ শুরু করেন। কিন্তু কাজ শেষ হওয়ার ছয় দিন পরই নালার একটি দেয়াল ভেঙে পড়ে। অর্থাৎ ঠিকাদার যে গুণগত মান বজায় রেখে নির্মাণকাজ শেষ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তিনি তা রক্ষা করেননি। এই ঠিকাদার কমলগঞ্জ পৌরসভার একজন সাবেক কাউন্সিলর।
নির্মাণকাজে অনিয়ম-দুর্নীতির এমন দৃষ্টান্তই সারা দেশে ছড়িয়ে রয়েছে। এসব দুর্নীতিবাজ ঠিকাদারের লাইসেন্স স্থায়ীভাবে বাতিল করা উচিত। দুর্নীতির দায়ে তাঁদের শাস্তি হিসেবে কারাদণ্ড ও জরিমানা করা উচিত।