এমন দুর্দশার দ্রুত পরিত্রাণ হোক

সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

দেশে নৌদুর্ঘটনা হরহামেশাই ঘটে। সেসব নৌযান উদ্ধারে উদ্ধারকারী জাহাজ হামজা ও রুস্তমের নাম আমরা শুনে আসছি কয়েক দশক ধরে। পরবর্তী সময়ে যুক্ত হয়েছে নির্ভীক ও প্রত্যয় নামে আরও দুটি জাহাজ। কিন্তু উত্তোলন ক্ষমতার হিসাবে নৌযান উদ্ধারে জাহাজ চারটির সক্ষমতা খুব বেশি নয়। তা ছাড়া হামজা-রুস্তমের আয়ুষ্কাল পার হয়ে গেছে বহু আগেই, অন্য দুটিও চলছে ফিটনেস সনদ হালনাগাদ ছাড়াই। উদ্ধারকারী জাহাজের অবস্থাই যদি এমন করুণ হয়, তাহলে বুঝতে অসুবিধা হয় না কীভাবে চলছে দেশের নৌযান উদ্ধার ব্যবস্থাপনা।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, জাহাজ নির্মাণশিল্পের বিকাশের কারণে পণ্যবাহী বড় জাহাজের (কার্গো) সংখ্যা কয়েক গুণ বেড়েছে। নৌপরিবহন অধিদপ্তর অনুমোদন দেয় দুই হাজার টনের কম ওজনের কার্গো জাহাজ তৈরির। এ ছাড়া সরকারি দুটি রকেট স্টিমারের প্রতিটির যাত্রীসহ ওজন প্রায় ১ হাজার ১০০ মেট্রিক টন। দক্ষিণাঞ্চলের নৌরুটের বিলাসবহুল যাত্রীবাহী বেসরকারি লঞ্চগুলোর ওজন ৭০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন পর্যন্ত। দেশের বিভিন্ন রুটে চলাচলকারী লঞ্চের অন্ততপক্ষে ৭০ শতাংশের ওজন ৩০০ মেট্রিক টনের বেশি। অথচ হামজা ও রুস্তমের সর্বোচ্চ উত্তোলন ক্ষমতা ৬০ মেট্রিক টন। নির্ভীক ও প্রত্যয়ের সর্বোচ্চ উত্তোলন ক্ষমতা ২৫০ টন। তার মানে বেশির ভাগ লঞ্চই দুর্ঘটনায় পড়লে উদ্ধার কার্যক্রম চালানোর কোনো সক্ষমতাই নেই বিআইডব্লিউটিএর।

বিআইডব্লিউটিএর সর্বশেষ হিসাবে, গত ১১ বছরে নৌদুর্ঘটনায় নৌযান ডুবেছে ৩৮৭টি। উদ্ধার করা হয়নি ১৮১টি। যদিও নৌ সড়ক ও রেলপথ রক্ষাকারী কমিটির মতে, একই সময়ে ১ হাজার ৫০০ নৌযান দুর্ঘটনায় পড়েছে। নৌযান অনুমোদনহীন হওয়ায় অনেক দুর্ঘটনার খবর মালিকপক্ষ কর্তৃপক্ষকে জানায় না। অন্যদিকে সরকারি হিসাবে দেশে মাত্র ১৩ হাজারের বেশি নৌযান চলাচল করে। তার মধ্যে রুট পারমিট থাকা যাত্রীবাহী জাহাজের সংখ্যা ৭৮০টি। তবে ২০০৭ সালের বিশ্বব্যাংক এক প্রতিবেদনে জানিয়েছিল, দেশে মোট নৌযান চলাচল করেই ৭ লাখ ৪৫ হাজারটি।

অথচ নৌযান চলাচল ও দুর্ঘটনার এমন পরিসংখ্যানের বিপরীতে উদ্ধারকারী নৌযান মাত্র চারটি, তা–ও সেগুলো নিয়ে আছে নানা অভিযোগ। ফলে উদ্ধার করতে না পেরে পরিত্যক্ত ঘোষণা করতে হয় অনেক নৌযান। এসব পরিত্যক্ত নৌযান নৌরুটের তলদেশে রয়ে যাওয়ায় বিঘ্নিত হয় নৌচলাচল। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এমন পরিস্থিতিতে উচিত নতুন আরও উদ্ধারকারী জাহাজ কেনা। অবশ্যই সেটি হওয়া উচিত নৌযানের আকার এবং নৌপথের অবস্থা বিবেচনায় নিয়েই। আশা করি, এ ব্যাপারে দ্রুত কার্যকরী সিদ্ধান্ত ও ব্যবস্থা নেবে কর্তৃপক্ষ।