এভাবে ২২৭ কোটি টাকা লোপাট হবে?

সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়

উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থ লোপাটে নতুন ফন্দির শেষ নেই দুর্নীতিবাজদের। তারই একটি নমুনা দেখা গেল চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন পরিকল্পনায়। শহরের বিভিন্ন সড়ক সংস্কার ও অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য বরাদ্দের তালিকায় ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে ভালো রাস্তাও। ৩৭টি ভালো রাস্তাকে সংস্কারে বরাদ্দ রাখা হয়েছে প্রায় ২২৭ কোটি টাকা। অথচ এসব রাস্তার কিছু কয়েক মাস আগে সংস্কার হয়েছে, কিছু রাস্তার সংস্কার চলমান আছে। একে কোনো রাখঢাক ছাড়াই সরকারি বরাদ্দ লোপাট করার উৎসবে মেতে ওঠার পরিকল্পনা ছাড়া আর কীই–বা বলা যায়!

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, ছোট–বড় ৩৭টি ভালো রাস্তার সংস্কারের জন্য গত চার বছরে ইতিমধ্যে প্রায় ১৮৭ কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে। এরপরও একটি উড়ালসড়কের ভালো রাস্তায় পিচ ঢালাইয়ের জন্য ১৫ কোটি টাকা খরচ করতে চায় করপোরেশন। উড়ালসড়কটির প্রকল্প পরিচালক বলছেন, আগামী চার-পাঁচ বছরেও এ রাস্তার সংস্কার প্রয়োজন নেই। আবারও পিচ ঢালাইয়ে উড়ালসড়কের ওপর ভার বেড়ে যাবে। আরও অবাক লাগতে পারে, জাইকার অর্থায়নে ১৮টি সড়কের যেখানে ইতিমধ্যে সংস্কারকাজ চলমান আছে, সেগুলোকেও সংস্কারের জন্য ১০২ কোটি টাকা বরাদ্দ ধরা হয়েছে। নতুন বরাদ্দ আনার জন্য ভালো সড়ক ঢুকিয়েও তালিকায় টান পড়ায় সম্ভবত নিস্তার পায়নি অন্য প্রকল্পের সংস্কারাধীন রাস্তাও।

যেকোনো উন্নয়ন পরিকল্পনার নানা দিক যাচাই-বাছাই করতে হয়, তারপরই মেলে অনুমোদন। অথচ এমন একটি প্রকল্প অনুমোদন পেয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে। কমিশনের সভায় এ–ও উঠে আসে, প্রকল্পের আওতায় কোটি টাকার দামি গাড়িসহ যন্ত্রপাতি কেনা বাবদ বরাদ্দ রাখা হয়েছে বেশি। যেসব যন্ত্রপাতি করপোরেশনের আছে মানে কেনার প্রয়োজন নেই, সেগুলোও আছে তালিকায়। তার মানে অবৈধ বাণিজ্য–চক্রের জন্যও ‘সুবর্ণ’ সুযোগ রাখা হয়েছে। এখন এটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায়।

চট্টগ্রামে উন্নয়ন প্রকল্পের শেষ নেই। এরপরেও চট্টগ্রামের বাসিন্দাদের দুর্গতির শেষ নেই। প্রশ্নবিদ্ধভাবে করা হয়েছে একের পর এক উড়ালসড়ক। যুগ পার হয়ে যায় কিন্তু জলাবদ্ধতা সমস্যার সমাধান হয় না। টানা কয়েক ঘণ্টার বৃষ্টিতেই পুরো শহরের রাস্তা, নালা, খাল সব পানিতে সমান হয়ে যায়। সড়কের পাশে এলাকায় এলাকায় মরণফাঁদ তৈরি হয়ে আছে। নালায় পড়ে চলতি বছরেই কয়েকজন মারা গেল। সর্বশেষ এক ব্যক্তির তো লাশই খুঁজে পাওয়া গেল না। কার্যকর বা জনগণের কাজে লাগবে, এমন প্রকল্প গ্রহণের চেয়ে যদি কারও কারও পকেট ভরার ফন্দিফিকির থাকে, তবে যা হওয়ার তাই হচ্ছে চট্টগ্রামের অনেক উন্নয়ন প্রকল্প নিয়ে।

সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) চট্টগ্রামের সম্পাদক আখতার কবির চৌধুরী বলছেন, এভাবে প্রকল্প নেওয়াটাই অপরাধ, যা দুর্নীতির পর্যায়ে পড়ে। এখন কি এ প্রকল্প একনেকে অনুমোদন হতে দেখব আমরা? গোঁজামিলে পূর্ণ প্রকল্পটি শুধু বাতিল নয়, যাঁরা এই প্রকল্প প্রস্তাব তৈরি বা পরিকল্পনা করেছেন, তাঁদের জবাবদিহি নিশ্চিত ও বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। এ ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।